'সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরাই ফারুককে হত্যা করেছেন'
সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর ভাইয়েরাই আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে হত্যা করেছেন বলে আবারও দাবি করেছেন ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ। এই হত্যা মামলায় স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী। আজ বুধবার টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আমানুরের আইনজীবীর জেরায় এ দাবি করেন তিনি।
আজ আদালতে নিহত ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদকে সাংসদ আমানুরের আইনজীবী আবদুল বাকী মিয়া প্রথমে জেরা করেন। এরপর এ মামলার পলাতক সাত আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আরফান আলী মোল্লা নাহার আহমেদকে জেরা করেন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় সাংসদ আমানুর ও তাঁর তিন ভাইসহ মোট ১৪ জন আসামি। এর মধ্যে আমানুরের তিন ভাইসহ সাতজন পলাতক রয়েছেন। আমানুরসহ কারাগারে বন্দী আছেন চারজন। বাকি তিন আসামি জামিনে মুক্ত আছেন।
পলাতক সাত আসামির মধ্য রয়েছেন আমানুরের তিন ভাই—টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং কবির মিয়া, আলমগীর হোসেন চাঁনে, ছানোয়ার হোসেন ও বাবু মিয়া।
টাঙ্গাইল আদালত পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খান ওরফে রানাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে মাইক্রোবাসে করে আজ বেলা সোয়া ১১টায় টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। সাড়ে ১১টার দিকে বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এই মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। মামলার বাদী নাহার আহমেদকে আমানুর ও পলাতক আসামিদের আইনজীবীরা দুই ঘণ্টা জেরা করেন।
মামলার আরও দুই সাক্ষী নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুনের হাজিরা আদালতে দাখিল করা হয়। পরে আদালত বাদীর জেরা গ্রহণের পর আগামী ২৭ জুন পরবর্তী সাক্ষ্যর দিন ধার্য করেন।
মামলার প্রধান আসামি সাংসদ আমানুর ছাড়াও টাঙ্গাইল কারাগারে থাকা আরও তিন আসামি মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান রাজা ও মো. সমিরকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া জামিনে থাকা আসামি নাসির উদ্দিন নুরু, মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ফরিদ আহম্মেদ আদালতে হাজিরা দেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুরেই সাংসদ আমানুরকে কড়া পুলিশি প্রহরায় কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর আমানুর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এই আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১-এ আছেন। বেশ কয়েক দফা উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ কলেজপাড়া এলাকায় তাঁর বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। গত ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।