‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে
‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: শফিকুল

বর্তমান সময়ে যাঁরা ভালো জানেন, তাঁরা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘সরকার মিসইনফরমেশন (ভুল তথ্য) নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিন ও মাইলস্টোন নিয়ে ভুয়া খবরের পরিমাণ ছিল অযাচিত। চট্টগ্রাম পোর্ট এবং উত্তরপাড়া নিয়ে যে পরিমাণ মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়েছে, তা অকল্পনীয়।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন শফিকুল আলম। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালনায় ছিলেন সিজিএসের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আলোচনায় শফিকুল আলম বলেন, সরকারের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক ১৯৪৭ সাল থেকে ওঠানামা করছে। কখনো ভালো অবস্থায়, কখনো আবার খারাপ অবস্থায়। আইয়ুব খানের সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল, কিন্তু ’৯০ এর পর সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা পেয়েছিলেন কেয়ারটেকার সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ আমলে সাংবাদিকতার অবস্থা তলানিতে গিয়েছিল। হাসিনার আমলের সাংবাদিকতার দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চলছে।

প্রেস সচিব বলেন, ‘বর্তমানে অনেকে মবের ভয় পাচ্ছেন, তবে আমরা কখনো কোনো নিউজ নিয়ন্ত্রণ করব না। এখন প্রশ্ন হলো, সামনে যদি রাজনৈতিক সরকার আসে, তাহলে কি এই সংস্কৃতি থাকবে? বর্তমানে এমন মানুষও মিসইনফরমেশন ছড়াচ্ছেন, যাঁরা ভালো জানেন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত।’

বিদেশে মিসইনফরমেশন ছড়ালে জরিমানা করা হয় উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রতিদিন টক শোতে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। আমরা মেটাকে ফেসবুকে মিসইনফরমেশন নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছি, কিন্তু এটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া।’

‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে

ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন সরকারকে মিসইনফরমেশন মোকাবিলার বিষয়ে ‘ব্রেনস্টর্মিং’ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা মিসইনফরমেশন ট্যাকেল (মোকাবিলা) করতে না পারি, তবে ভবিষ্যতের গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।’

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল এবং আজও সেই প্রভাব বিদ্যমান।’ গণমাধ্যমের রূপ বদলেছে, কিন্তু সংস্কৃতি বদলায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। সিজিএস-এর গবেষণায় দেখা গেছে, গণমাধ্যমের মালিকানাকাঠামো স্বাধীন সাংবাদিকতার জায়গা সংকুচিত করেছে। মফস্‌সল সাংবাদিকতার দুর্বলতা ও দুর্নীতি এবং সাংবাদিকদের অপ্রতুল বেতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জিল্লুর রহমান।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, তারা যেন গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়গুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর, বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী সাইমুম পারভেজ, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুর মঈন, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিকুস সালেহীন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সচিব দিদার ভূঁইয়া, আমার বাংলাদেশ পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল।