
দীর্ঘদিনের দাবির পর অবশেষে বাংলাদেশের বাইরে বসবাসরত দেড় থেকে দুই কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটাধিকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমবারের মতো প্রবাসীরা ডাকযোগে বা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে লন্ডনে মাঠে নেমেছে ‘পলিসি ফর গুড গভর্ন্যান্স’ নামের একটি সংগঠন।
২৩ নভেম্বর রোববার পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউহাম বারার গ্রিন স্ট্রিট, স্টার্টফোর্ড এলাকায় প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে সচেতনতামূলক প্রচার চালায় সংগঠনটি। ব্যস্ততম স্টার্টফোর্ড স্টেশন এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অ্যাপে নিবন্ধনে সহায়তা করতে দেখা যায় তাদের।
সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর মাহবুবা জেবিনের নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন নাজমুল হুদা সাগর, মারুফ গিয়াস বাপ্পী, শেখ নাসির, ফয়সাল আহমেদ, কানিজ ফাতিমা, তুহিন মোল্লা ও মাসুদুর রহমানসহ আরও অনেকে। তাঁরা পথচারী বাংলাদেশিদের মোবাইলে নির্বাচন কমিশনের অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেন এবং নির্ধারিত সময় সম্পর্কে অবহিত করেন। এর আগে ১৪ নভেম্বর ‘প্রবাস থেকে ভোট প্রদান’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করেন তাঁরা।
২৯ নভেম্বর থেকে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য ইসি অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন। যুক্তরাজ্য হাইকমিশনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত কনটেন্ট প্রচার করছে। তবে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ খুব কমই দেখা যাচ্ছে বলে অভিমত প্রবাসীদের।
পলিসি ফর গুড গভর্ন্যান্সের কো-অর্ডিনেটর মাহবুবা জেবিন জানান, লন্ডনের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অন্যান্য শহরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় এই প্রচার চালানো হবে, যাতে প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসাহিত হন।
বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনপ্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে ইনফোগ্রাফিক, ভিডিও টিউটোরিয়াল ও বার্তা প্রচার করছে। হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন বলেন, ‘গত চার দিন যাবৎ আমরা হাইকমিশনের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার তথ্য এবং পদ্ধতি প্রচার করছি। বেশিসংখ্যক ভোটার যাতে নিবন্ধিত হতে পারেন, সে জন্য আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে এই প্রচারণায় যুক্ত করব।’
১৫ নভেম্বর শনিবার যুক্তরাজ্য বিএনপি বাংলা গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের সাথে এ সম্পর্কিত একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। যুক্তরাজ্য বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতনতার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছি। যুক্তরাজ্যে আমাদের সাংগঠনিক চেইনের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সবাই যেন দলের নেতা–কর্মীসহ নিজ নিজ পরিবারের সদস্য, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোস্টাল ভোটের জন্য নিবন্ধিত হোন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি এবং ব্রিটিশ–বাংলাদেশিরা পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। এ জন্য প্রথমে স্মার্টফোনে নির্বাচন কমিশনের ‘নাগরিক’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। তাতে এনআইডির তথ্য, পাসপোর্ট নম্বর এবং যুক্তরাজ্যের ঠিকানা যুক্ত করতে হবে। তথ্য যাচাই শেষে ইসি থেকে ভোটদানের অনুরোধ গৃহীত হলে ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূরণ করা ব্যালট ডাকযোগেই ফেরত পাঠাতে হবে।
নিবন্ধনের শর্ত ও যোগ্যতা: জন্মসূত্রে বা বংশসূত্রে বাংলাদেশি, বৈধ পাসপোর্ট বা এনআইডি সংরক্ষিত থাকতে হবে। বিদেশে বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ লাগবে এবং আগেই ভোটার হলে একই তথ্য হালনাগাদ করতে হবে।
ইসি জানিয়েছে, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবে করা হবে যাতে কোনো প্রতারণা বা ভুয়া ভোটার নিবন্ধন না ঘটে।