নুসরাত জাহান
নুসরাত জাহান

‘আদরের মাইয়া খুব সুন্দর আছিল’

তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল নুসরাত জাহান আনিকা। নতুন জামা পরতে, খেতে ও ঘুরতে পছন্দ করত সে। পরিবারের সঙ্গে সম্প্রতি কক্সবাজারেও ঘুরে আসে। কিন্তু সবার আদরের হাসিখুশি নুসরাত এখন শুধু আনন্দ দিনের ছবির স্মৃতি।

নুসরাত রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত সোমবার বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সে নিহত হয়। বাবা আবুল হোসেনের ভাষায়, ‘আমার আদরের মাইয়া খুব সুন্দর আছিল। ওর শরীর তেমন পোড়ে নাই। ধোঁয়ায় মারা গেছে। ভবনের নিচতলায় ছিল।’

মেয়ের শোকে এই বাবা ক্ষণে ক্ষণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। উত্তরা দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ডিপোর পাশেই তাঁদের বাড়ি। দুর্ঘটনার আওয়াজে তাঁরা ছুটে যান স্কুলে। কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও খোঁজ পাচ্ছিলেন না। সন্ধ্যার দিকে সিএমএইচের মর্গে মেয়েকে শনাক্ত করেন তিনি।

আবুল হোসেন নিজে বা তাঁর স্ত্রী মেয়েকে স্কুলে আনা–নেওয়া করতেন। সোমবার ক্লাস শেষ করে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল সে। এর মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।

মেয়ের কথা বলতে বলতে এই বাবা বলেন, ‘কী কইরা যে বলি! সুন্দর সুন্দর জামা পরতে, খেতে পছন্দ করত। যা চাইছে তা–ই খাওয়াইছি। কালকে যখন শব্দ শুনি, দৌড়াইয়া যাইয়া দেখি, আগুন আর আগুন।’

বাবার আক্ষেপ, ভবনের যদি আর কোনো সিঁড়ি বা গেট থাকত, তাহলে অনেকেই বের হতে পারত।

নুসরাতের বাবা ও ভগ্নিপতি মো. শাকিল উভয়েই কোচিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শাকিল নিজেকে মাইলস্টোনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী উল্লেখ
করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি অনেক চাপ দেয়। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বাধ্য করা হয় কোচিংয়ের জন্য। তাই গত মাসে তাঁরা নুসরাতকে দিতে বাধ্য হয়েছেন। শাকিল বলেন, সকাল থেকে বিকেল তিনটা–চারটা পর্যন্ত এই ছোট বাচ্চাদের তারা ধরে রাখে। কাল যদি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা না করে বের হয়ে যেত, তাহলে শিশুরা বেঁচে যেত।