রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যৌথভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। আজ শনিবার সকালে
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যৌথভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। আজ শনিবার সকালে

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় নির্বাচনের আগে-পরে এক মাস সেনা মোতায়েনের দাবি

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে অন্তত এক মাস ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সেনা ও বিশেষায়িত বাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। এটিসহ ৯টি দাবি জানানো হয়েছে।

‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি।

মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে সংখ্যালঘুদের অতীত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বেদনার, একই সঙ্গে উদ্বেগ ও শঙ্কার। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ২০০৮ সালের নির্বাচন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে প্রত্যেকটি নির্বাচনে, নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আরও বলেছে, সব নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রদায়গত ঘৃণা বিদ্বেষ প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা করেছে। নির্বাচনে পরাজিত দল হামলা ও নির্যাতন করে, কিন্তু দেখা গেছে বিজয়ী দলও হামলা করে। আর নির্বাচনে হামলার মুখ্য শিকার হয় প্রধানত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক প্রচারণা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করে বয়ান প্রকাশ এবং সভা-সমাবেশে, বিশেষ করে ধর্মীয় সমাবেশে বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সব সময় এক শঙ্কার মধ্যে রাখে বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। তারা বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। নির্বাচন এলে তা আরও বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, বিশেষ করে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে শঙ্কা ও অনীহা তৈরি করে। এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

৯ দফা দাবি

এক, মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় যুগোপযোগী সংস্কারসহ বাহাত্তরের সংবিধান হবে আগামী দিনে রাজনীতির মূল ভিত্তি, রাজনীতি ও সব নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে।

দুই, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে।

তিন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। দলীয় কাঠামোতেও যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত থাকতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের সময় আইনগত বাধ্যবাধকতার বিধান করতে পারে।

চার, জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাপর অন্তত এক মাস ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সেনা ও বিশেষায়িত বাহিনী মোতায়েন নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনেও নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাঁচ, জীবন জীবিকার সব পর্যায়ে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বৈষম্য নিরসন করতে হবে।

ছয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যাঁদের নির্বিচারে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে।

সাত, বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, জায়গাজমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

আট, গণ-অভ্যুত্থানের পর ব্যাপক হারে ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হয়েছে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে তা স্বীকৃত হয়েছে। এসব মামলায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিদ্বেষপ্রসূতভাবে জড়ানো হয়েছে। কাউকে কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে।

নয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মূল আট দফা দাবি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে অঙ্গীকার ঘোষণার মাধ্যমে সম-অধিকারের চেতনার প্রতি অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় ছিলেন, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল।