উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাফ আদিয়াত সোয়াদ
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাফ আদিয়াত সোয়াদ

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত

বইয়ের প্রতি ভালোবাসায় বেঁচে গেছে আকাফ

আকাফ আদিয়াত সোয়াদ। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। রুটিন অনুযায়ী গত সোমবারও স্কুলে গিয়েছিল আকাফ। ক্লাস শেষে স্পেশাল বৃত্তি ব্যাচের কোচিং ক্লাস করার কথা ছিল। কোচিং ক্লাসের জন্য নির্ধারিত কক্ষেও গিয়েছিল সে। তবে সেখানে ব্যাগ রেখে আকাফ সহপাঠীদের নিয়ে বইমেলায় যায়। এটাই শাপে বর হয়েছে ওর জন্য। জীবন বেঁচেছে আকাফের।  

ঘড়িতে তখন বেলা একটা। স্কুল ভবনের ১০১ নম্বর কক্ষে ক্লাস শেষ হয় আকাফের। এরপর সে একই ভবনের ১০৯ নম্বর কক্ষে চলে যায়। সেখানেই কোচিং ক্লাস হওয়ার কথা। ওই কক্ষে ব্যাগ রেখে বেরিয়ে যায় আকাফ। পাশেই স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের ভবনে বইমেলা চলছিল। বই পড়তে ভালোবাসে সে। তাই বন্ধু–সহপাঠীদের নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিল সে।

এর পরপর বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান আছড়ে পরে ভবনটিতে। বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো স্কুল চত্বর। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনজুড়ে। যেই ভবনে আকাফের ক্লাসরুম, কোচিং রুম, সেখানে যেন বিভীষিকা নেমে আসে।

আকাফের সঙ্গে আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। পাশে ছিলেন শিশুটির মা রীনা নাসরিন। তাঁরা তখন স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে। ছেলের ফেলে যাওয়া ব্যাগ নিতে এসেছেন এই মা।

রীনা নাসরিন বললেন, ‘আকাফের কোচিংয়ের শিক্ষক গ্রুপে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) মেসেজ দিছেন, ব্যাগটা তাঁর জিম্মায় আছে। কিন্তু আজ তিনি স্কুলে আসেননি। আমরা তাই ঢুকতে পারিনি।’

বিমান বিধ্বস্তের দিনের কথা জানতে চাইলে আকাফ বলে, ‘আমি তখন বইমেলায় ছিলাম। হঠাৎ করে অনেক জোরে একটা শব্দ হইল। বাইরে আইসা দেখি, আমাদের ভবনের সিঁড়ির পাশে দাউ দাউ কইরা আগুন জ্বলতেছে। আর ধোঁয়া চারদিকে ছড়ায় গেছে। সবাই চিৎকার কইরা দৌড়াচ্ছে।’

আকাফ জানায়, কয়েকজন বন্ধু–সহপাঠীসহ বইমেলায় না গেলে তখন সে ওই কোচিং ক্লাসেই থাকত। চোখের সামনে বিমান বিধ্বস্ত, আগুন, মৃত্যু—মুহূর্তের মধ্যে এত এত বিভীষিকা দেখেছে সে। এখনো সেই ভীতির রেশ কাটেনি শিশুটির।

আকাফ জানায়, স্পেশাল বৃত্তি ব্যাচে পাঁচজন ছিল ওর গ্রুপ থেকে। অন্য তিনটি গ্রুপের আরও ১৫ থেকে ১৬ জন ছিল একই ব্যাচে। বইমেলায় যাওয়ার আগে কয়েকজন ব্যাগ রেখে বেড়িয়ে গিয়েছিল। অন্যরা তখন ওই কক্ষে ছিল কি না, নিশ্চিত করে বলতে পারে না সে।

রীনা নাসরিন জানালেন, পরিবার নিয়ে তুরাগের নয়ানগর শুক্রাভাঙ্গা এলাকায় থাকেন তিনি। ছেলের যে কোনো ক্ষতি হয়নি, সেটা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ধরে আসছিল তাঁর। বললেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে বাঁচাইছে। বইমেলায় গিয়েছিল বলেই বাঁচল। ব্যাগ পেলাম কি পেলাম না, সেটা বড় কথা না। আমার ছেলেটা বেঁচে আছে, এটাই সবচেয়ে বড়।’