
নিজস্ব তহবিলে জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের গঠন করা বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) ৮৯১টি প্রকল্পে ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির হিসাবে বিসিসিটি প্রকল্পের ৫৪ শতাংশের বেশি অর্থ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ গবেষণায় বিসিসিটির ৮৯১টি প্রকল্পের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প অনুমোদনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনে ১৭৫ কোটি টাকা, ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মে ৬০০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তদারকি পর্যায়েও ৫৪ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটির অধীনে অনুমোদিত ৮৯১টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১১১ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অপচয় বা আত্মসাৎ হয়েছে। এ হিসাবে ৫৪ দশমিক ১৮ শতাংশ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
প্রকল্পে দুর্নীতির মূল ক্ষেত্রগুলো হলো প্রকল্প অনুমোদনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেন, ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে অর্থ আত্মসাৎ। ২০১৯–২০২৩ সালে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর অর্ধেকের বেশি ছিল সৌর সড়কবাতি স্থাপনসংক্রান্ত, যেখানে অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে ১৭০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ হয়েছে বলে টিআইবির অনুমান।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু তহবিলে দুর্নীতির ধরন ও মাত্রা নির্দেশ করে এটি রাজনৈতিক যোগসাজশে দুর্নীতির এক বিশেষ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এতে জড়িত রয়েছেন বোর্ডের সদস্য, প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল ও বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের একটি অংশ।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি আত্মসাৎ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখে থাকা দেশের জন্য এটি অত্যন্ত বিব্রতকর। সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে বিসিসিটিকে পেশাদারভাবে পুনর্গঠন করা এখন সময়ের দাবি।