
যে মোটরসাইকেল থেকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছিল, তার মালিক সন্দেহে পরদিনই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মো. আবদুল হান্নানকে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার এই ব্যক্তিকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করলেও তাঁর সঙ্গে এ ঘটনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এখন জামিন পেলেন তিনি।
সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার আবদুল হান্নানের আবেদনে আজ রোববার তাঁকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান শাহাদাত। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান প্রথম আলোকে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হান্নানের পক্ষে আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
এই জামিন আদেশের ফলে এক সপ্তাহ পর আবদুল হান্নানের কারামুক্তির পথ খুলল। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এই ব্যক্তি এর আগে আদালতে বারবার বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর মোটরসাইকেলটি তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালানোর সময় ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয় নগরে আক্রান্ত হন ওসমান হাদি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে, মোটরসাইকেল আরোহী দুই ব্যক্তি হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও বাঁচানো যায়নি। গত বৃহস্পতিবার সেখানে তিনি মারা যান। মরদেহ দেশে আনার পর গতকাল লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর তাঁকে সমাহিত করা হয়।
ওসমান হাদিকে গুলিবর্ষণের পরদিন ১৩ ডিসেম্বর র্যাব আবদুল হান্নানকে আটক করে পল্টন মডেল থানায় তুলে দেয়। তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।
রিমান্ড শুনানিতে আবদুল হান্নান বারবার বলেছিলেন, তিনি ওই মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছিলেন একটি শোরুমে (বিক্রয়কেন্দ্র)। বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য র্যাব ও পুলিশকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে ওই বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা তাঁর কথা শোনেনি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ড চলাকালে আবদুল হান্নানকে ওই শোরুম মালিকের মুখোমুখি করা হয়। এ ছাড়া বিআরটিএতে তাঁর নামে নিবন্ধিত দুটি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি সুজুকি জিক্সার ও আরেকটি ইয়ামাহা। তবে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে হোন্ডা ব্র্যান্ডের হর্নেট মডেলের গাড়ি। হান্নানের মোটরসাইকেলের নম্বরের সঙ্গেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নম্বরের একটি সংখ্যায় অমিল রয়েছে।
রিমান্ড শেষে ১৭ ডিসেম্বর আবদুল হান্নানকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সেই দিনই তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
ওসমান হাদিকে গুলিবর্ষণকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের এক যুবককে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, ওই দিন মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন আলমগীর শেখ নামের এক ব্যক্তি। ফয়সাল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এবং সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহসভাপতি।
পুলিশ ও র্যাব ফয়সালের স্ত্রী, মা, বাবাসহ মোট ১৪ জনকে এ ঘটনায় আটক করেছে। তবে ফয়সালের খোঁজ এখনো মেলেনি। তিনি ও আলমগীর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওসমান হাদি হামলার শিকার হওয়ার পর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের পল্টন থানায় ১৪ ডিসেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। হাদির মৃত্যুর পর গতকাল তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ।