
মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল। এসব গোপন কারাগারে বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন জেল থেকে মানুষদের এনে নির্যাতন করা হতো।
মো. নূর খান বলেন, ‘পুলিশ লাইনস বলে একটা জিনিস আছে জেলায়। এই পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল। কীভাবে এটা সম্ভব? কীভাবে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানা জেলা থেকে মানুষকে নিয়ে টর্চার করা হতো।...বর্তমান পুলিশ হেডকোয়ার্টার যেটা, সেটার নিচে এলআইসি নামে একটা ডিভিশন আছে সেখানে বন্দীদের এনেও টর্চার করা হতো।’
‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মো. নূর খান। আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মো. নূর খান উদাহরণস্বরূপ বগুড়া ও বাগেরহাটের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিককালে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যেয়ে এসব তথ্য পেয়েছেন। এসব ঘটনার সঙ্গে বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও দেশ পরিচালনাকারীরা সরাসরি জড়িত ছিলেন।
পুলিশের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন নূর খান। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে যদি আপনি তার মতো চলতে দিতে পারেন এবং সেখানে কমিশনের যদি একটা হস্তক্ষেপ থাকে অর্থাৎ কমিশন যদি বিষয়গুলো জানে ও তারা যদি পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে এই জায়গাটায় কিছুটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স (ভারসাম্য রক্ষা) হবে। পদায়নের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হবে।’
সুশীল সমাজের যারা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো জানেন, বোঝেন ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন, তাঁদের পুলিশ সংস্কার কমিশনে যুক্ত করার পরামর্শ দেন এই মানবাধিকারকর্মী।
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন মো. নূর খান। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশ বাহিনীর রাজনীতিকীকরণ করবে না, এমন প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে।
শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
গোলটেবিলে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী।
এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম এ বৈঠকে অংশ নেন।