Thank you for trying Sticky AMP!!

শুধু ‘আরাভ খান’ নন, দুবাইকে নিরাপদ ভাবেন অনেক অপরাধী

দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান (বাঁয়ে)। তাঁর গ্রামের বাড়িতে থাকেন না কেউ। বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে কোটালিপাড়া উপজেলা হিরন ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কালোটাকার মালিকদের গন্তব্য হয়ে উঠছে। সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় পড়া রুশ ধনকুবেরদের অনেকে দুবাইয়ে থিতু হয়েছেন খবর বেরিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও। বিভিন্ন খাত থেকে পাচার হওয়া অর্থ দুবাইয়ে বিনিয়োগের কথাও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায়ও এসেছে। তবে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ অনেক আগে থেকেই দুবাইয়ে স্থায়ী হয়েছেন। সেখান থেকে তাঁরা দেশের অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ করছেন, বিভিন্ন সময় নানা ঘটনায় সেটা আলোচনায়ও এসেছে।

দেশে অপরাধ করে দুবাইয়ে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি এখন আবার আলোচনায় এসেছে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের কল্যাণে, যিনি দুবাইয়ে রাতারাতি স্বর্ণ ব্যবসায় বড় বিনিয়োগ করে গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, এই রবিউল ওরফে আরাভ পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খুনের মামলার আসামি।

এর আগে ঢাকার মতিঝিলের অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বে এক বছর আগে খুন হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আসে। দুবাইয়ে বসেই জাহিদুলকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন যে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী, তাঁদের একজন জিসান আহমেদ দুবাই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। অন্যজন জাফর আহমেদ ওরফে মানিক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও নিয়মিত দুবাই যাতায়াত করেন। এমন অন্তত এক ডজন শীর্ষ সন্ত্রাসী দুবাই শহরে নিয়মিত যাতায়াত করেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিষয়ে খোঁজ রাখেন, এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের বড় অপরাধীরা নিয়মিত দুবাই শহরে যাতায়াত করেন। বসবাসের পাশাপাশি অবকাশযাপনে দুবাই শহর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। এ কারণে বাংলাদেশি অপরাধীরাও দুবাই শহরে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তা ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় সেখান থেকে অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা কঠিন।

জিসান আহমেদ

জিসান আহমেদ

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ২০১৯ সালে দুবাই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকার পরও সে সময় তাঁকে ফেরানো যায়নি। বিষয়টি তখন দুবাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। কারণ, তিনি ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই শহরে বসবাস করছেন। জিসানের বিরুদ্ধে ৬টি হত্যাসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। জিসানের কাছে ডমিনিকান রিপাবলিকের একটি পাসপোর্টও আছে। জিসান মূলত খিলগাঁও, শাহজাহানপুর এলাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের কাছে দুটি দেশের পাসপোর্ট রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনের আসামি রবিউল ইসলামের (আরাভ খান হিসেবে পরিচিত) কাছেও ভারতীয় পাসপোর্ট আছে। অনেক অপরাধী নিজেদের যাতায়াত নিরাপদ করতে এমন কৌশল নিয়ে থাকে।

জাফর আহমেদ ওরফে মানিক

দুবাই যাতায়াত তানভীর–জাফরসহ অনেকের

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, জিসানের মতো অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করেছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভীর ইসলাম জয় ভারতীয় পাসপোর্টে মালয়েশিয়ায় স্থায়ী হয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও দুবাই শহরে নিয়মিত যাতায়াত করেন। মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম খুনের নির্দেশদাতা জাফর আহমেদ মানিকেরও অন্য দেশের পাসপোর্ট রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি নিয়মিত দুবাই যাতায়াত করেন। মালয়েশিয়ায় স্থায়ী হওয়া মগবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী রবিন ও ডালিমও নিয়মিত দুবাই যান। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়া গুলশান-বনানী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদিও দুবাই যাতায়াত করেন। মালয়েশিয়াপ্রবাসী রামপুরা এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ঘাতক স্বপনও দুবাইয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন।

Also Read: ‘চুপচাপ ছেলেটির’ হঠাৎ উত্থানে বিস্মিত পশ্চিমবঙ্গের কন্দর্পপুরের মানুষ

রবিউলকেও ফেরানো সহজ হবে না

দুবাই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিসানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ব্যক্তি অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে বিদেশ গেলে সে দেশের কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গণ্য করে না। ওই ব্যক্তিকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে হয়। জিসানও এ সুবিধা নিয়েছিলেন।

Also Read: আরাভ খানের মাথার ওপর কোন সে হুমা পাখি?

তানভীর ইসলাম জয়

ওই কর্মকর্তা বলেন, জিসানকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তের সম্পর্ক আছে জিসানের এমন স্বজনের রক্তের নমুনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ প্রক্রিয়া শুরু করতে করতে অনেক সময় চলে যায়। এর মধ্যে জিসান জামিনে বেরিয়ে যান। ফলে তাঁকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সফল হয়নি।

Also Read: দুবাইয়ে চালু হচ্ছে নতুন সোনার দোকান, যাচ্ছেন সাকিব আল হাসানসহ অনেক দেশের ক্রিকেটার

রবিউল ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না বলেও এই কর্মকর্তা মত দেন। তিনি বলেন, রবিউলকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও একই জটিলতা তৈরি হবে। তা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ নেই। রেড নোটিশ জারির পর তাঁকে গ্রেপ্তার করার পরও জটিলতা রয়েছে। বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় তাঁকে কোন প্রক্রিয়ায় ফেরানো হবে, সে বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।

Also Read: দুবাইয়ের আরাভ জুয়েলার্স: ঢাকায় পুলিশ খুনের আসামি নাম বদলে হয়েছেন আরাভ

রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

Also Read: তদন্তের প্রয়োজনে সাকিব, হিরো আলমকে জেরা করা হতে পারে: ডিবি