
গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে আগামী মঙ্গলবার। এ মামলার ১৭ আসামির মধ্যে ১২ জনই বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ রোববার এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম করে রাখার ঘটনায় মামলাটি হয়। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আজ আদেশ দেওয়ার কথা ছিল। আসামিপক্ষের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আগামী মঙ্গলবার আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার ও মো. কামরুল হাসান এবং লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমানের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। আবেদনে তিনি বলেছেন, এই তিন আসামির সঙ্গে ‘প্রিভিলেজড কমিউনিকেশনের’ (একান্ত আলাপ) লিখিত আদেশ যখন প্রস্তুত হয়েছিল, তারপর আধা ঘণ্টাও সময় পাননি। সে কারণে তিনি এ মামলা থেকে তাঁর মক্কেলদের অব্যাহতির আবেদন দিতে পারেননি।
এরপর মনসুরুল হকের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তখনই মনসুরুল হককে অব্যাহতির আবেদন উপস্থাপন করতে বলেন।
আবেদনে আইনজীবী মনসুরুল বলেন, যাঁদের গুম করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের গুমের ক্ষেত্রে এই তিন আসামির কী ভূমিকা ছিল, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের কোথাও একটি কথা বলতে পারেনি প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠন করতে হলে আসামির বিরুদ্ধে অবশ্যই পরিষ্কার অভিযোগ থাকতে হবে, যা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রসিকিউশন।
তা ছাড়া এই তিন আসামি র্যাবে থাকার সময় টিএফআই সেল তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, ছিল র্যাবের মহাপরিচালকের অধীনে। সে কারণে মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি চান বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী।
১৭ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন ১০ জন। তোফায়েল, কামরুল ও মশিউর ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মাহাবুব আলম ও কে এম আজাদ; কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে); লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম। তাঁদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ মামলার আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, এম খুরশীদ হোসেন ও মো. হারুন অর রশিদ এবং লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম পলাতক।
এ মামলায় গ্রেপ্তার সাত আসামির আইনজীবী তাবারক হোসেন আজ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনটি আবেদন করেন। একটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমের জামিন আবেদন, দ্বিতীয়টি গুমের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের অনুমতি প্রার্থনা এবং তৃতীয়টি র্যাবের কাছ থেকে কিছু তথ্য চেয়ে আবেদন। ট্রাইব্যুনাল এসব আবেদন পরে শুনতে চেয়েছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর রাফাত-বিন-আলমের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
তাঁদের আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর দুই মক্কেলের বিষয়ে ইতিমধ্যে কোর্ট অব ইনকোয়ারি করেছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। সেখানে দেখা গেছে, রেদোয়ানুল ও রাফাতের গুলিতে অথবা তাঁদের কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বছরের ১৮ ও ১৯ জুলাই হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সে প্রতিবেদন প্রসিকিউশনই উপস্থাপন করেছে। এ কারণে এই দুজনকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন।
এ মামলায় ২৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করেছেন। মামলার অপর দুই আসামি পুলিশের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান পলাতক।