কর্মচারী রিয়াদ হত্যা

ঘরোয়া হোটেলের মালিক আরিফুল গ্রেপ্তার হননি

ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী রিয়াদ (১৬) হত্যার প্রধান আসামি আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যে আরিফুলের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে হুমকি দিয়েছেন রিয়াদের বড় ভাই মামলার বাদী মো. রিপনকে। ফলে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে রাজধানী ঢাকায় ফিরে আসতে ভয় পাচ্ছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে রিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালিকের বড় ভাই বৃহস্পতিবার ফোন করে মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলে। তাই বাড়ির লোকজন আমারে ঢাকায় যাইতে মানা করছে।’
২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে ৭৩ নম্বর স্বামীবাগে ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারীদের মেসে রিয়াদকে মারধর ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই বাড়ির দোতলায় লাগানো তিনটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে পুলিশ। ফুটেজে দেখা যায়, হোটেল মালিক আরিফুলসহ বেশ কয়েকজন যুবক রিয়াদকে মারধর করে রাত পৌনে একটার দিকে মেসের ভেতর নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর রাত ১টা ৭ মিনিটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রিয়াদকে আরিফুলের পাজেরো জিপে তুলে নিয়ে যেতেও দেখা যায় ওই ফুটেজে।
পরে কর্মচারী জসিমকে দিয়ে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনা হয়। সেখানে ছিনতাইকারীদের গুলিতে রিয়াদ মারা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে আরিফুল পলাতক আছেন।
বুধবার বিকেলে হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম, দুই কর্মচারী জসিম ও খবিরকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেন রিয়াদের ভাই রিপন। পরদিন বৃহস্পতিবার ভিডিও ফুটেজে আরিফুলের এই হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় পুলিশ।
ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাতে রিয়াদের লাশ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা (পূর্ব) ইউনিয়নের হাড়িয়াইন গ্রামে আনা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁর লাশ দাফন করা হয়। ওই দিন সকালে আরিফুলের ভাই শহীদুল মুঠোফোনে রিপনকে ঢাকায় এসে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এ কারণে গ্রামের বাড়িতে নিজের জীবননাশের মধ্যে রয়েছেন রিপন। হাজীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করবেন বলে জানান রিপন।
রিপন বলেন, ঢাকার ফকিরাপুলের ভাই ভাই হোটেল অ্যান্ড সুইটসে দৈনিক ২৮০ টাকায় চাকরি করেন তিনি। কিন্তু ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পর এখন ঢাকায় ফিরতে চাইছেন না তিনি।
এর আগে ঘরোয়া হোটেলেই কাজ করতেন রিপন। তিনি বলেন, চাকরি ছাড়ার পর রিয়াদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আরিফুল গালাগালি করতেন। চার-পাঁচ মাস আগে হোটেলের সামনে তাঁকে লাথি মেরে ফেলে দেন আরিফুল।
রিয়াদ হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি জসিমকে গতকাল সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে হোটেলের পাঁচ কর্মচারী সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন হোটেল ম্যানেজার শফিক, চার কর্মচারী জসিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, মো. রাজু ও সাগর ইসলাম।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পলাতক আরিফুল ও খবিরকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে।
এদিকে প্রধান আসামি আরিফুল ইসলামকে ধরতে পুলিশের গাফিলতি ছিল কি না, জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ঘটনার পর ভোরবেলা রিয়াদকে হত্যার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। প্রথমে ম্যানেজার শফিক আসল ঘটনা স্বীকার করেননি। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ভোরবেলা তিনি স্বীকার করেন। এরপর সকাল সাতটার দিকে আরিফুলের চামেলীবাগের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এর আগেই তিনি পালিয়ে যান।