বস্তি উচ্ছেদের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

কল্যাণপুর পোড়া বস্তি উচ্ছেদ না করার দাবিতে বস্তিবাসী ​গতকাল দুপুরে রাজধানীর টেকনিক্যাল থেকে শ্যামলী পর্যন্ত মানববন্ধন করেন। ছবিটি কল্যাণপুর এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
কল্যাণপুর পোড়া বস্তি উচ্ছেদ না করার দাবিতে বস্তিবাসী ​গতকাল দুপুরে রাজধানীর টেকনিক্যাল থেকে শ্যামলী পর্যন্ত মানববন্ধন করেন। ছবিটি কল্যাণপুর এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

রাজধানীর কল্যাণপুর পোড়া বস্তি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে মানববন্ধন করেছেন বস্তির বাসিন্দারা। এ সময় তাঁরা সড়কের একপাশে বসে পড়লে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কল্যাণপুর পোড়া বস্তির বাসিন্দারা দুই দিন ধরে উচ্ছেদ আতঙ্কে আছেন। বস্তি উচ্ছেদের ব্যাপারে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলেও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আজ-কালের মধ্যে বস্তিটি ভেঙে দেবে বলে বস্তিবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে। মালপত্র সরিয়ে নিতে বেঁধে দেওয়া দুই দিন সময় গতকাল বুধবার শেষ হয়েছে। এভাবে উচ্ছেদের প্রতিবাদে বস্তিবাসীরা টেকনিক্যাল মোড় থেকে কল্যাণপুর হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত সড়কের একপাশে মানববন্ধন করেন।
গতকাল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার রাত থেকেই উচ্ছেদ আতঙ্কে আছেন বস্তিবাসী। কেউ বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। বস্তির সবার মুখে এক কথা, ‘বস্তি নাকি ভাইঙা দিবে’। অনেকে অতিপ্রয়োজনীয় ও মূল্যবান কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন। ভ্যানগাড়িতে করে জিনিসপত্র নিয়ে অনেককে বের হতে দেখা যায় গতকাল।
বস্তির কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশনের (সিবিও) সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে ঝুপড়ি ঘরে কেউ সুখে নাই। বাধ্য হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার ব্যবস্থা করে দিলে সব বস্তিবাসী চলে যাবে। কিন্তু এভাবে হঠাৎ উচ্ছেদ করলে কেউ মানবে না।’
বস্তির বাসিন্দাদের অধিকাংশই রিকশাচালক, পোশাকশ্রমিক কিংবা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষায় সবাই কাজ বাদ দিয়ে চলে এসেছিলেন মানববন্ধনে। কারও কোলে দুধের বাচ্চা, কারও সঙ্গে বয়স্ক বাবা-মা। বাদ যাননি শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও।
মানবন্ধনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাজারের মাছবিক্রেতা ও বস্তির বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে কেউ কাজে যায় নাই। আগে তো থাকার জায়গা বাঁচাইতে হইবো। আমরা কী এ দেশের নাগরিক না। অন্য জায়গা না দিয়া এমনে ভাইঙা দিলে আমরা কই যাব।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী অবন্তী নুরুল প্রথম আলোকে বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জায়গায় বস্তিটি গড়ে উঠেছিল। এখানে এখন প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাস করে। সে সময় সরকার এই বস্তি উচ্ছেদের চেষ্টা করলে রিটটি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ এখনো বলবৎ রয়েছে।