বাসে উঠলেই ১০ টাকা

>
বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের িভড়। বৃহস্পতিবার টঙ্গী কলেজগেট এলাকায়। মো. আল-আমিন
বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের িভড়। বৃহস্পতিবার  টঙ্গী কলেজগেট এলাকায়।  মো. আল-আমিন
  • এক কিলোমিটার দূরত্বেও ভাড়া ১০ টাকা
  • নিয়মিত যাত্রী, শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে
  • প্রায়ই বাগবিতণ্ডা হচ্ছে

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। এটুকু সড়কের দুই পাশে আছে প্রচুর শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি। তাই রাস্তাটি সব সময় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সড়কটিতে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। সিটিং সার্ভিসের নামে এক কিলোমিটার দূরত্বেও সর্বনিম্ন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এতে নিয়মিত যাত্রী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা। আবদুল্লাহপুর থেকে ‘বলাকা সিটিং সার্ভিস’ নামে একটি বাসে ওঠেন শাকিল আহমেদ নামের এক চাকরিজীবী। যাবেন টঙ্গী স্টেশন রোড। বাসের সহকারী ভাড়া চাইলে ৫ টাকা দেন শাকিল। কিন্তু সহকারী ১০ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে দুজনের মাঝে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে টঙ্গী স্টেশন রোড গিয়ে বাস থেকে নামতে গেলে পথ আটকে রাখেন সহকারী। এরপর নিরুপায় হয়ে ১০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামেন তিনি।

আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত দূরত্ব ১ কিলোমিটার। বিআরটিএর নীতিমালা অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা। সে হিসাবে এটুকু পথের ভাড়া ৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু শাকিলকে ১০ টাকা দিতে হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু বাস থামছে না। দু-একটি বাসে চালকের সহকারী জানালার ফাঁক দিয়ে ১০ টাকা ভাড়া বলে যাত্রীদের ডাকছেন। এটা শুনে কেউ এগোচ্ছে, কেউ এগোচ্ছে না। কিছু বাসে দু-একজন যাত্রী নিচ্ছে। তাও চলন্ত অবস্থায়। আবার কিছু বাস শিক্ষার্থী দেখে দরজাই খুলছে না। বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল মিথিলা নামের এক ছাত্রী। সে বলে, ‘এখান থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত ভাড়া ৫ টাকা। কিন্তু ১০ টাকার নিচে নেয় না।’

প্রায় আধঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিল সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী তমা। সে যাবে বড়বাড়ি। কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছে না। সব সিটিং সার্ভিস। ১০ টাকার নিচে ভাড়া নেই। এ জন্য অপেক্ষা করছে বিআরটিসির বাসের জন্য। জানতে চাইলে তমা বলে, ‘সকালে আসার সময় সিটিং সার্ভিসেই আসি। কারণ তখন দেরি হইলে ক্লাস মিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যাওয়ার সময় বিআরটিসির বাসে ৫ টাকা দিয়া যাই।’

এটুকু রাস্তায় বাসে যাত্রী ওঠানামা করে ১৪-১৫টি জায়গায়। এ ছাড়া রাস্তার দুই পাশে প্রচুর শিল্পকারখানা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাড়ি থাকায় লোকজনের যাতায়াত বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় নেই পর্যাপ্ত গণপরিবহন।

কথা হয় সিটিং সার্ভিসের কয়েকজন চালকের সঙ্গে। এর মধ্যে ছালছাবিল পরিবহনের চালক মো. শরিফ বলেন, ‘মালিকরা আমাগোর কাছ থেকে টাকা বেশি নিলে আমগোর তো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি না নিয়া উপায় থাকে না।’ সু-প্রভাত স্পেশাল সার্ভিসের চালক মো. আরিফ বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা পুরা ভাড়া দিতে চায় না। এ কারণে তাদের একটু কম উঠাই।’

স্থানীয় কয়েকজন যাত্রী জানান, আগে চৌরাস্তা থেকে ছালছাবিল, অনাবিল, আজমেরী, গ্লোরী, তুরাগ, ১৩২, ভিআইপি, ভিআইপি ২৭, সু-প্রভাত নামে বেশ কিছু লোকাল বাস ছিল। এসব বাসে কম খরচে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা যেত। এখন বাসে উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তা ছাড়া বাসগুলো নামেই সিটিং সার্ভিস। চলে লোকালের মতো। এসব বাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসনেরও ব্যবস্থা নেই।

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তবে আমি অবশ্যই দেখব।’