সূচিকর্মে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ৩৯টি ছবি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুই-সুতায় ছবিটি ফুটিয়ে তুলেছেন ইলোরা পারভীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুই-সুতায় ছবিটি ফুটিয়ে তুলেছেন ইলোরা পারভীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

সেলাইশিল্পী ইলোরা পারভীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক ১৩টি ছবি সুই-সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সাতটি, বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানার একটি, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি, মা-বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, মুজিব বর্ষের লোগো তিনটি, বঙ্গবন্ধু পরিবারের একটি সাত ফুট লম্বা ছবিসহ মোট ৩৯টি মূল ছবিকে সুই-সুতায় ফুটিয়ে তুলেছেন এই শিল্পী। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ছোট সদস্য শেখ রাসেলও বাদ যায়নি।

আজ শনিবার মোবাইলে কথা হয় ইলোরা পারভীনের সঙ্গে। বললেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সেলাই করছেন। এ পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি গুণীর পোর্ট্রেট বা অবয়বসহ অন্যান্য চিত্রকর্ম তৈরি করেছেন। আর এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবি, মুজিব শতবর্ষের লোগোসহ মোট ৩৯টি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন।

কাজটি ইলোরা পারভীন ভালোবেসেই করেন। তাই বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিয়ে করা শিল্পকর্মের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইলোরা আক্ষেপ করে বললেন, সেলাই শুরু করার আগে একটি স্পষ্ট এবং সুন্দর ছবি সামনে রেখে কাজ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবার ছবি পাওয়াটাই কঠিন হয়ে যায়।

মা-বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবিটি সুই-সুতায় ফুটিয়ে তুলেছেন ইলোরা পারভীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইলোরা পারভীনের সূচিকর্মের তিনটি ছবি কিনেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে হাসুমণির পাঠশালা জাতীয় জাদুঘরে ইলোরার সূচিকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। দৃক গ্যালারিতেও তাঁর সূচিকর্মের একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের পারিবারিক ছবিটি সুই-সুতায় ফুটিয়ে তুলেছেন ইলোরা পারভীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ইলোরা পারভীন বললেন, ‘আমি বর্তমান সরকারকে খুশি করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কাজ করি না। সরকার বদলের সময়ও আমার কাজ থামেনি। শুধু সরকারকে খুশি করতে চাইলে আমি মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, এস এম সুলতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে শুরু করে অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করতাম না, শুধু বঙ্গবন্ধু বা তাঁর পরিবার নিয়েই কাজ করতাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ দলিলে সই করছেন লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি ও লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা—এ ধরনের বিষয়কেও আমি সেলাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছি। আমার যা ভালো লাগে, তা-ই সুই-সুতায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে, তাই তাঁকে নিয়ে কাজের সংখ্যা বেশি।’

শেখ রাসেল, শেখ কামাল, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও শেখ জামালের ছবিটি সুই-সুতায় ফুটিয়ে তুলেছেন ইলোরা পারভীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

স্বামী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়জুল্লাহ বিশ্বাস ইলোরা পারভীনের সেলাইকর্মে সার্বিকভাবে সহায়তা করেন। দশম ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া দুই মেয়েকে নিয়ে ইলোরার সংসার। আর রাজধানীর আজিমপুরে একটি সরকারি কোয়ার্টারে তাঁর সংসারে ঘরের দেয়ালে, আলমারিতে স্থান করে নিয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের শিল্পকর্মগুলো। ঘরে জায়গার অভাবে সব শিল্পকর্ম বাঁধাই করে রাখা সম্ভব হয়নি।

ইলোরা পারভীনের সূচিকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

ইলোরা নড়াইলের মেয়ে। মাছিমদিয়া গ্রামের বিখ্যাত শিল্পী এস এম সুলতান ছিলেন ইলোরার বাবার বন্ধু। ছোটবেলাতেই পাশের বাড়িতে থাকা এই গুণী শিল্পীর পাশে বসে শিল্পীর আঁকা দেখেছেন। এস এম সুলতানের সঙ্গে কাজ করা দুলাল চন্দ্র সাহা ছিলেন ইলোরার সেলাইয়ের গুরু।

মা-বাবাকে সুই-সুতায় ফুটিয়ে তুলেছেন ইলোরা পারভীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ইলোরার সূচিকর্ম নিয়ে আয়োজন হয়েছে প্রদর্শনীর। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া