বাসাবো মাঠের উন্নয়নকাজ শুরুর আগে এর চারপাশে সীমানাপ্রাচীর ছিল না। সর্বসাধারণের জন্য সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত ছিল।

উন্নয়নকাজের জন্য দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল রাজধানীর বাসাবো খেলার মাঠ। পরে উদ্বোধন শেষে আরও দুই বছর পেরিয়েছে। তবে মাঠটি খুলে দেওয়ার পর থেকে ধরাবাঁধা নিয়মে এটি ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঠে লাগানো ঘাস যাতে নষ্ট না হয়, এ জন্য দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৯ ঘণ্টাই এটি বন্ধ রাখা হচ্ছে। এমনকি সপ্তাহের প্রতি রোববার রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাতে মাঠটি বন্ধ থাকছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বাসাবো মাঠের উন্নয়নকাজ শুরুর আগে এর চারপাশে সীমানাপ্রাচীর ছিল না। সর্বসাধারণের জন্য সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত ছিল। দিনভর খেলাধুলার পাশাপাশি রাতেও অনেকে এ মাঠে খেলাধুলা করতেন। কিন্তু আধুনিকায়ন করতে গিয়ে চারপাশে লোহার খাঁচার মতো সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হয়েছে। ঘাস নষ্ট হবে এ অজুহাতে সকালে তিন ঘণ্টা আর বিকেলে মাত্র দুই ঘণ্টা মাঠ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এমন উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে বাসাবো মাঠের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর মাঠের নামকরণ করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলাউদ্দিন পার্ক।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে প্রবেশের মূল ফটকেই বিভিন্ন নির্দেশনা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটিতে লেখা ‘সপ্তাহের সোমবার হতে শনিবার পর্যন্ত ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত এবং বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মাঠ ব্যবহার এবং রাত আটটা পর্যন্ত ওয়াকওয়ে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লেখ্য, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রোববার পার্ক বন্ধ থাকবে। অনুরোধক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’ আরেকটি নির্দেশনায় লেখা মাঠ পরিচর্যার জন্য খেলাধুলা বন্ধ থাকবে। হাঁটার জন্য সকাল-সন্ধ্যা খোলা থাকবে। তবে বাচ্চা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। আরেকটি নির্দেশনায় লেখা রয়েছে, ভোর ছয়টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত, সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হাঁটার জন্য মাঠের ভেতর বসা যাবে না।
মাঠ ব্যবহারকারীরা বলছেন, সকালে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা এবং বিকেলে দুই থেকে তিন ঘণ্টা মাঠ সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠে দামি ঘাস লাগানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক মাঠ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে মাঠের অবস্থা সমুদ্রের তীরের মতো হবে; তখন মাঠে কেবল বালু থাকবে। এ জন্যই মাঠ ব্যবহারের সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করে মাঠের উন্নয়নকাজ শেষে এটি খুলে দেওয়া হলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। স্থানীয় ব্যক্তি ও ঠিকাদারের মাধ্যমে গত দুই বছর ধরে মাঠের দেখভাল করা হচ্ছে। এতে এলাকার শিশু–কিশোরসহ সর্বসাধারণ সার্বক্ষণিকভাবে মাঠ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠ ব্যবহারকারীদের জন্য দক্ষিণ পাশে শৌচাগার তৈরি করা হলেও আগত ব্যক্তিদের এসব ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে নারীরা বেশি বিপাকে পড়ছেন। শৌচাগারের ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বাসাবো খেলার মাঠের উন্নয়নকাজের দেখভাল করেছে দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-২। জানতে চাইলে অঞ্চল-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, মাঠের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে এটি সংস্থার সম্পত্তি বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠের দেখভাল করবে দক্ষিণ সিটির পরিবেশ সার্কেল। তাদের এ মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য তিনি কয়েকজন মালি পেয়েছেন। প্রতিটি অঞ্চলে মালিদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রকৌশলী জনবলসংকটের কথা বলেন।