নিহত ব্যবসায়ী আবদুর রহিম এবং তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ রিমন
নিহত ব্যবসায়ী আবদুর রহিম এবং তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ রিমন

ভূমিকম্প

ছুটির দিনে মাংস খাওয়া হলো না বাবা–ছেলের, মর্গে মিলল লাশ

ছুটির দিন সকালে মাংস কিনতে পুরান ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ব্যবসায়ী আবদুর রহিম, সঙ্গে নিয়েছিলেন স্কুলপড়ুয়া ছেলে আবদুল আজিজ রিমনকে। বংশালের কসাইটুলীতে নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। তখনই ভূমিকম্প; তীব্র ঝাঁকুনিতে ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে। তাতে একসঙ্গে প্রাণ হারান বাবা–ছেলে।

আজ শুক্রবার সকালের এই ভূমিকম্পে কসাইটুলীর ওই দোকানের সামনে মাংস কিনতে দাঁড়িয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলামও নিহত হন। তাঁর মা নুসরাত জাহান গুরুতর আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলের (১২) লাশ মিটফোর্ডের মর্গে সকাল থেকে পড়ে ছিল। স্বজনদের কেউ জানতেন না মৃত্যুর খবর। বেলা দুইটার দিকে তাঁদের খোঁজে হাসপাতাল আসেন রহিমের ছোট ভাই মো. নাসির ও মো. গোলাম মোস্তফা।

ভাইয়ের লাশ দেখে মর্গের সামনে আর্তনাদে ভেঙে পড়েন মো. নাসির। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাই খুব ভালো মানুষ। দুই বছর আগে হজ করে আসছে। ও আমার ভাই। আমার ভাইকে যেন আল্লাহ জান্নাতবাসী করেন।’

রহিমের আরেক ভাই ফিরোজ আলমও আর্তনাদ করছিলেন, ‘আমার ভাই, আমার কলিজা ছিল, আমাকে ছাড়া কোনো কাজ করত না। আরে আমার ভাই, ভাই।’

মর্গের সামনে নিহত আবদুর রহিমের দুই ভাইয়ের আহাজারি। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল

রহিমের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের বশিকপুর গ্রামে। পুরান ঢাকার গার্ডেন সিটিতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন তিনি। সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার।

ছুটির দিনে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজনের করেছিলেন রহিম। সেই কারণে তিনি মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছোট ছেলে আজিজকে।

রহিমের ভাই নাসির জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মা মাহফুজা বেগম তাঁকে ফোন করে বলেন, তাঁর ভাই ও ভাতিজা সকালে মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন। ভূমিকম্পের পর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা মর্গে আসেন।

ফিরোজ আলম জানান, নিহত রহিমের বড় ছেলে এক মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন, মেজ ছেলে একটি মাদ্রাসায় পড়েন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, আজ সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন কসাইটুলীতে কেপিগোজ স্ট্রিটের ২২/সি ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে নয়নের মাংসের দোকানের সামনে পড়ে। মাংস কেনার জন্য অনেকে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আহত ব্যক্তিদের পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) নিলে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।