
দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসী হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউর সামনে এই কর্মসূচি থেকে হামলায় জড়িত সবাইকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানা হয়।
মানববন্ধনে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলা, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোলায়মান হোসাইনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়। হামলাকারীরা ভাঙচুর–লুটপাটের পাশাপাশি সংবাদপত্র দুটির ভবন আগুনে পুড়িয়ে দেয়। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এমন হামলায় দেশে ও বিদেশে নিন্দার ঝড় বইছে।
মানববন্ধনে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের হামলায় জড়িত সবাইকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যারা হামলা করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, এর উদ্দেশ্য ছিল—এখানে যাঁরা কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং সাংবাদিকেরা ছিলেন—তাঁদের পুড়িয়ে হত্যা করার একটা নীলনকশা। এর কারণ ছিল যে শহীদ হাদির (শরিফ ওসমান হাদি) হত্যার যে বিষয়টি, সেই বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার একটি দৃঢ় সংকল্প তাদের ছিল।’
১৭ বছর ধরে সাংবাদিকেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অভিযোগ করে আবু সালেহ বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতির কারণে তখন অনেকে প্রতিবাদ করতে পারেননি। আমরা সে সময়ও সবকিছু উপেক্ষা করে অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমেছি, প্রতিবাদ করেছি, আজও আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। ভবিষ্যতেও প্রয়োজনে রাস্তায় থাকব।’
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোলায়মান হোসাইনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান ডিআরইউ সভাপতি। দাবি মানা না হলে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম মানববন্ধনে বলেন, গণমাধ্যমের ওপর হামলার ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। অতীতে এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় আজ আবারও একই ধরনের হামলা ঘটছে।
খুরশিদ আলম বলেন, ‘যদি নয়াদিগন্ত, আমার দেশ কিংবা অন্যান্য গণমাধ্যমে আগুন দেওয়ার ঘটনার বিচার হতো, তাহলে আজ দুর্বৃত্তরা এই সাহস পেত না। সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনো একক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়; এটি পুরো গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। আজ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার, কাল অন্য কোনো গণমাধ্যম—এই ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে, যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ না হই।’
ডিআরইউ সিনিয়র সদস্য ও প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বলেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আগে মুখ ঢেকে হামলা করা হতো। এখন প্রকাশ্যে মুখ দেখিয়ে হামলা হচ্ছে। কারণ, হামলাকারীরা জানে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘হামলার সময় আমরা সারা রাত বিভিন্ন মহলের সহায়তা চেয়েও কার্যকর কোনো সহযোগিতা পাইনি। যারা শুধু হামলা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করলেই হবে না; যারা পেছন থেকে নির্দেশ দিয়েছে, উসকানি দিয়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ডিআরইউর নারীবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস পান্না বলেন, কোনো সভ্য দেশে গণমাধ্যমে এমন সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম, সাবেক সহসভাপতি গাযী আনোয়ার, বর্তমান সহ-সভাপতি মেহ্দী আজাদ মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম জসিম, দপ্তর সম্পাদক রাশিম মোল্লা, নারী বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মনোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহফুজ সাদি, মো. মাজাহারুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদক রোজিনা রোজী, সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য কুদরত-ই খোদা, স্থায়ী সদস্য শেখ আরীফ, নাজনীন আক্তার, শেখ আব্দুল্লাহ, মতলু মল্লিক, কামরুজ্জামান খান, আহমেদ আতিক, দীপন নন্দী, ডিএম আমিরুল ইসলাম অমর প্রমুখ।
এছাড়া ডিআরইউর যুগ্ম সম্পাদক মো. জাফর ইকবাল, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাহমুদ সোহেল, আপ্যায়ন সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া, কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন চৌধুরীসহ ডিআরইউর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।