কাজ পেতে এককালীন ২০ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। ১০ লাখ অফেরতযোগ্য।
কাজ সন্তোষজনক না হলে জামানতের ১০ লাখ থেকে টাকা কেটে রাখা হবে।
কাজের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে যাচাই করা হবে।
বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ পেতে হলে ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) বার্ষিক ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে অফেরতযোগ্য ফি ১০ লাখ টাকা। বাকি ১০ লাখ টাকা ফেরতযোগ্য জামানত। কাজের চুক্তির আগেই এই টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড, অর্থাৎ পুরোনো ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করতে গেলে এই টাকা দিতে হবে। আর নতুন (৩৭-৫৪ নম্বর) ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে জামানত ও বার্ষিক ফি বাবদ ৬ লাখ করে মোট ১২ লাখ টাকা দিতে হবে।
গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে সম্প্রতি উত্তর সিটি করপোরেশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনসংক্রান্ত নীতিমালা বা সংশোধিত টার্মস অব রেফারেন্সে (টর) বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভ্যান প্রতিষ্ঠান ময়লা সংগ্রহের বিনিময়ে এলাকাভেদে বাসাপ্রতি ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নিতে পারবে।
নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী, ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক সেবা দিতে না পারলে জামানত থেকে টাকা কাটা হবে। এ ক্ষেত্রে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ টাকা কাটা হবে।
ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে তা এসটিএসে নেয়। এ জন্য এত দিন ধরে ইচ্ছেমতো ময়লার বিল আদায় করছিল তারা। এলাকাভেদে বাসাবাড়ি থেকে ৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিল নেয়। হোটেল-রেস্তোরাঁয় নেওয়া হয় দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সাধারণত কোনো সেবার বিনিময়ে রাজস্ব বা কর আদায় করে থাকে। সিটি করপোরেশন ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে কী সেবা দেওয়ার বিনিময়ে ওই টাকা নেবে, তা টার্ম অব রেফারেন্সে স্পষ্ট করা হয়নি। কারণ, সিটি করপোরেশন শুধু অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) থেকে স্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রে বা ল্যান্ডফিলে বর্জ্য নিয়ে যায়। এ জন্য সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ গৃহকরের মাধ্যমে বাসিন্দাদের থেকে ওই টাকা আদায় করে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এখন আবাসিক ভবন থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর নেয় ১২ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর ২ শতাংশ। আর বাণিজ্যিক ভবন থেকে নেওয়া হয় ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর ৭ শতাংশ।
ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এককালীন ফি নেওয়া হচ্ছে। আর নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের প্রতি যাতে দায়বদ্ধ থাকে এবং নীতিমালা মেনে চলে, সে জন্য জামানত নেওয়া হবে। কেউ অমান্য করলে ব্যবস্থা হিসেবে জামানত থেকে অর্থ কেটে রাখা হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী বছর আর কাজের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে তা এসটিএসে নেয়। এ জন্য এত দিন ধরে ইচ্ছেমতো ময়লার বিল আদায় করছিল তারা। এলাকাভেদে বাসাবাড়ি থেকে ৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিল নেয়। হোটেল-রেস্তোরাঁয় নেওয়া হয় দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
টার্মস অব রেফারেন্সে প্রতিটি বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকানপাট বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ময়লার ফি আদায়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ১ থেকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ময়লার বিল নেওয়া যাবে ১০০ টাকা। আর নতুন ওয়ার্ড এলাকায় (৩৭-৫৪ নম্বর ওয়ার্ড) ৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে এখন তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে। কোনো কোনো ওয়ার্ডে ৩০টির বেশি ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কাজ করে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ওয়ার্ডে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানই কাজের অনুমতি পাবে।
১০০ নম্বরে যাচাই
নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহের কাজে কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা, ব্যাংক সলভেন্সি সনদ, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট ও ট্যাক্স সনদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, মুঠোফোন নম্বরসহ কার্যালয়ের ঠিকানা থাকতে হবে। আবেদনের সঙ্গে ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা পে-অর্ডার দিতে হবে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে যাচাই করা হবে। এর মধ্যে দেশের যেকোনো সিটি করপোরেশনের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে দেওয়া হবে ২০ নম্বর। আর ঢাকা উত্তর সিটিতে অভিজ্ঞতা থাকলে পাবে আরও ১০ নম্বর। প্রতিটি ভ্যানের বিপরীতে দুজন কর্মী নিয়োগ, এসটিএসে একজন প্রতিনিধি ও সার্বিক কাজ তত্ত্বাবধানে একজন প্রতিনিধি থাকলে দেওয়া হবে আরও ১০ নম্বর।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে এক টন ওজন পরিবহন ক্ষমতার একটি পিকআপ ও কমপক্ষে ১৫টি ভ্যান থাকলে আরও ৪০ নম্বর পাবে। তবে ভ্যানগুলোকে অবশ্যই দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হতে হবে। এর বাইরে ব্যাংক সলভেন্সি, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, টিআইএন সনদ, পে-অর্ডার, ফোন নম্বর ও অফিস ঠিকানার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ নম্বর।
সব মানদণ্ড যাচাই-বাছাই করে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে দুই বছরের জন্য কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। এক বছর পর অনুমতি নবায়ন করতে হবে। কাজ পাওয়ার পর ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের প্রথম বছরের প্রতি মাসে কাজের মান ১০টি বিষয়ের ওপর ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে যাচাই করা হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে—পরিবেশসম্মতভাবে বর্জ্য সংগ্রহ, বর্জ্য সংগ্রহের যানবাহনের মান, বর্জ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ, অতিরিক্ত ফি আদায় করছে কি না, বাসিন্দাদের সঙ্গে আচরণ, কর্মীদের নির্ধারিত পোশাক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রভৃতি।
এক বছরে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ১০টি এ গ্রেড ও দুটি বি গ্রেড পেলে কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই আবার অনুমতি পাবে। আর কোনো প্রতিষ্ঠান যদি একটি সি গ্রেড এবং তিনটি বি গ্রেড পায়, তাহলে অনুমতি বাতিল করা হবে। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরপর দুই মাস ‘বি’ গ্রেড পেলে জামানত ৫ শতাংশ কাটা হবে। আর তিন মাস ‘বি’ গ্রেড পেলে ১০ শতাংশ কাটা হবে।
কাজের গুণগত মান যাচাই ও গ্রেড প্রদানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যসচিব থাকবেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, সহসভাপতি নারী কাউন্সিলর, সদস্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তা।