পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ‘শরৎ উৎসব ১৪৩২’ আয়োজনের জন্য জড়ো হয়েছেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। আজ শুক্রবার সকালে
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ‘শরৎ উৎসব ১৪৩২’ আয়োজনের জন্য জড়ো হয়েছেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। আজ শুক্রবার সকালে

বকুলতলায় স্থগিত, গেন্ডারিয়াতেও ‘শরৎ উৎসব’ করতে পারেনি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ‘শরৎ উৎসব’ করতে না পেরে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া গিয়েছিল সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সেখানেও অনুষ্ঠান করতে পারেনি।

বকুলতলায় বাধা ছিল চারুকলা কর্তৃপক্ষ। তারা এই উৎসবটি স্থগিত করে ‘গণ্ডগোল’ এড়াতে। গেন্ডারিয়ায় বাধা দেয় পুলিশ; কারণ দেখায়, অনুমতি নেওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনেক বছর ধরে ‘শরৎ উৎসব’ আয়োজন করে আসছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আজ শুক্রবার এবারের আয়োজন সাজিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিয়েছিল তারা।

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ৭টা থেকে চারুকলার বকুলতলায় অনুষ্ঠানটি করার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তাঁরা চারুকলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁদের বলা হয়, অনুষ্ঠানটি করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ এসেছে। অনুষ্ঠান ঘিরে হাঙ্গামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখানে অনুষ্ঠান করা যাবে না। পরে তাঁরা গেন্ডারিয়ায় কিশলয় কচি–কাঁচার মেলার মাঠে অনুষ্ঠানটি করার পরিকল্পনা নেন।

মানজার চৌধুরী আরও বলেন, গেন্ডারিয়ায় আজ সকাল ৯টার দিকে তাঁরা যখন অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছিলেন, তখন পুলিশ আসে। তারা বলে, অভিযোগ আছে, এখানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের অনুসারী সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নাম করে দলটিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। এ অনুষ্ঠান করা যাবে না। তা ছাড়া অনুষ্ঠান করার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শুধু জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। আর অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। এরপর তাঁরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, গেন্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচার মেলার খেলার মাঠে শরৎ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আয়োজকেরা অনুষ্ঠানস্থল কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেয়নি। তা ছাড়া তারা অনুষ্ঠান করার জন্য পুলিশেরও অনুমতি নেয়নি। সে কারণে আয়োজকদের এখানে অনুষ্ঠান না করতে বলা হয়।

স্থগিতাদেশের ব্যাখ্যা চারুকলার 

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীকে ‘শরৎ উৎসব’ করতে না দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে আজ শুক্রবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন চারুকলা অনুষদের ডিন মো. আজহারুল ইসলাম শেখ।

তাতে বলা হয়, বকুলতলায় বরাবরের মতো সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শরৎ উৎসব আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে অনুষ্ঠান আয়োজকদের একজন ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পীসমাজ উৎসবটি বন্ধের জন্য চারুকলা অনুষদে আবেদন করে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আপাতত অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে।

আগামীকাল শনিবার অনুষদের শিক্ষক ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি অথবা সংগঠনের বিষয় খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আজহারুল ইসলাম এর আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসর উল্লেখ করে অনেকের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এবং গন্ডগোলের ইঙ্গিত পেয়ে আমরা এটি সাময়িকভাবে স্থগিত করি। অনেক জায়গা থেকে ফোনে আপত্তি জানানো হয়েছে৷ অনেকে ফোনে বলেছেন, আমরা ফ্যাসিবাদের দোসরদের অনুষ্ঠান করার সুযোগ দিচ্ছি, আমরা যদি এমনটা করি, তাহলে গন্ডগোল হবে। সেই জায়গা থেকে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে, বাতিল করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে উদ্‌যাপন করা হবে। আগামীকাল একটি মিটিং করে আমরা পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’