শাহবাগে সমাবেশে প্রশ্ন

চা-শ্রমিকদের মাথাপিছু আয়ের ৩ হাজার ডলার কোথায়

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতিতে চা-শ্রমিকেরা। ভুরভুরিয়া চা-বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, ১৮ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর শাহবাগ থেকে একদল নাগরিক প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার ডলার। সেখানে ১ লাখ ২৪ হাজার চা-শ্রমিকদের ভাগের টাকা কোথায়? চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা হওয়াটা ‘পুঁজিবাদের নিকৃষ্টতম উদাহরণ’। মাথাপিছু আয় বাড়ার যে ‘সিন্দাবাদের গল্প’ তা সত্য নয়।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক দল-সংগঠনের প্রতিনিধিরা। চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ন্যায্য আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, চা-শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার। একজন চা-শ্রমিক দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান আর ওয়াসার এমডি মাসে বেতন পান সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এই ঘটনাগুলোর মূল জায়গাটা হচ্ছে পুঁজিবাদের নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

আমাদের এখানকার পুঁজিবাদ হলো রাক্ষুসে পুঁজিবাদ। যাঁর ক্ষমতা আছে, তিনি ক্ষমতা উপভোগ করছেন। কিন্তু চা-শ্রমিকদের ক্ষমতা নেই বলে তারা তা উপভোগ করতে পারছেন না। এখানে রাষ্ট্র তাঁর দায়িত্ব পালন করছে না। দেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার ডলার বলা হচ্ছে। এই আয় বাড়ার যে সিন্দাবাদের গল্প, তা সত্য নয়। ১ লাখ ২৪ হাজার চা-শ্রমিকের ভাগের আয় কোথায়? এই অবস্থা চলতে পারে না। সীমাহীন লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফী বলেন, ব্রিটিশ আমলে ১৮৫৪ সালে যখন চা উৎপাদন শুরু হয়, তখন পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের ৪ আনা, নারীদের ৩ আনা আর শিশুদের ২ আনা মজুরি ছিল। ২০২২ সালে সেই মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। চা বাগানের মালিকেরা তাঁদের দালালদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা আজগুবি হিসাব ছেড়েছে যে প্রতিদিন একজন শ্রমিককে নানা সুযোগ-সুবিধাসহ ৪০২ টাকা দেওয়া হয়। তাঁদের যে রেশন দেওয়া হয়, তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। সরকারের শ্রম আইনে বলা হয়েছে, মাটি কাটা শ্রমিককেও ন্যূনতম ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। চা-শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরি চেয়েছেন। কিন্তু তা-ও করা হচ্ছে না। দুটি বাগান বাদ দিলে সব চা বাগানের মালিক নব্য অতি ধনীরা।

গত কয়েক বছরে লুটপাট করে তারা অর্থ উপার্জন করেছেন। চা বাগানগুলো তাঁদের আমোদ-প্রমোদের জায়গা। শ্রমিকের দিকে নজর দেওয়ার সময় তাদের নেই। এভাবে চললে মহাখালীতে চা সংসদ কার্যালয়ের ভবন আমরা নাগরিকেরা অবরোধ করব।

যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক সালিম সামাদ, মানবাধিকার কর্মী একরাম হোসেন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের সংগঠক আকরামুল হক, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, চা-শ্রমিকের সন্তান সরফরাজ সাজু প্রমুখ বক্তব্য দেন।