
নারী-পুরুষের বৈষম্য, পিতৃতান্ত্রিকতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগঝুঁকি ও বিপন্নতা একটি সামগ্রিক বিষয়। এগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নারীর দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস এবং দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি।
জলবায়ু অভিযোজন ও জলবায়ু–সহিষ্ণু কার্যক্রম থেকে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন বিষয়ে একটি কর্মশালায় কথাগুলো বলেন বক্তারা। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) এবং জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউএন-উইমেন ও সহযোগী সংগঠনগুলো। বিসিএএসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিসিএএসের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য আপা প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কেয়া খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগঝুঁকি ও বিপন্নতা একটি সামগ্রিক বিষয়। নারীর দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস এবং দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি।
বিসিএএসের গবেষণা ফেলো দ্বিজেন মল্লিক নারীবান্ধব অভিযোজন এবং নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষণীয় বিষয় ও চ্যালেঞ্জগুলো উপস্থাপনা করেন। ইউএন উইমেনের চলমান প্রকল্পের নানা দিক তিনি তুলে ধরেন। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ পাঁচটি অঞ্চলের (জামালপুর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনা) ১০ ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। নারীপ্রধান স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) কারিগরি সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইউএন উইমেনের জলবায়ু অভিযোজন ও দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচির প্রধান দিলরুবা হায়দার বলেন, বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস এবং অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কিন্তু এরপরও নারী-পুরুষের বৈষম্যের কারণে এই প্রকল্পগুলো থেকে সঠিক ফল পাওয়া যায় না। সামাজিক অবস্থা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে এই প্রকল্পে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। নারীবান্ধব অভিযোজন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য নীতিনির্ধারকদের মানসিকতায় পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিসিএএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক শেখর কান্তি রায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্যোগঝুঁকি নিরূপণ (সিআরএ) গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি পাঁচটি প্রতিবেশ অঞ্চলে পরিচালিত সিআরএ ফলাফল উপস্থাপন করে বলেন, সামাজিক বৈষম্য, স্থানীয় ক্ষমতার রাজনীতি, অপর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার কারণে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দুর্যোগঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না। স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও নারীর দুর্যোগঝুঁকি তথা বিপন্নতা এবং অভিযোজন চাহিদা সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ জরুরি।
অনুষ্ঠানে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কর্মনীড় সামাজিক মহিলা উন্নয়ন সংস্থার শাহানা বেগম, কামারখোলা সুতারখালী দরিদ্র মহিলা উন্নয়ন সংগঠনের হিমানী মিস্ত্রি, তরঙ্গ মহিলা কল্যাণ সংস্থার শামীমা খান, অ্যাসোসিয়েশন ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্টের (এএফএডি) সাইদা ইয়াসমিন এবং মিশন মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ছকিনা পারভীন তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলো এবং সুপারিশ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে বিসিএএসের চেয়ারপারসন খন্দকার মঈনউদ্দিন বক্তব্য দেন।