
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। পরিস্থিতি ‘খারাপ করা হলে’ যমুনা ঘেরাও করতে তারা বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চ। সেখানেই বিকেলে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের কর্মীরা।
এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও। টানা অবরোধ চলতে থাকায় শাহবাগের আশপাশের রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে।
আজকের কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত শহীদ হাদি হত্যার পেছনে যাঁরা জড়িত, এর যাঁরা পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী—তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। আমাদের আর ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আজকে শাহবাগ অবরোধ করেছি। আগামীকালও করা হবে। সারা বাংলাদেশ থেকে জনতা আসছে।’
প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার হুমকি দিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া হাদির ভাই শরিফ ওমর বিন হাদি বলেন, ‘সরকারের অবস্থা দেখে বোঝা যায়, বিচার নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। ওসমান হাদির বিচারের দাবি এখন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি। আমরা রাজপথে নেমেছি, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা কিন্তু আরও কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো। রাষ্ট্রের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই বলে দিতে চাই, আমাদের বাধ্য করবেন না ক্যান্টনমেন্ট বা যমুনা ঘেরাও করতে।’
আজ বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের জনগণকে ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগে এসে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ওসমান হাদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখ। তিনি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন। ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন তিনি। অনেক দিন ধরে তিনি গণসংযোগ করে আসছিলেন। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। গত শনিবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তাঁর জানাজা হয়। এরপর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে দাফন করা হয়।
ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ইনকিলাব মঞ্চ। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। অবরোধে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ‘আপস না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’; ‘আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব’; ‘শাহবাগ না ইনসাফ, ইনসাফ ইনসাফ’; ‘এই দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’; ‘বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’; ‘যেই হাদি জনতার, সেই হাদি মরে না’; ‘বাংলাদেশের আজাদি, ওসমান হাদি’; ‘সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চাই বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।