Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা জটিলতা এমআইএস-সিতে নটর ডেম ছাত্রের মৃত্যু

করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯ রোগের জটিল ও বিরল অসুস্থতা মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেনে (এমআইএস-সি) আক্রান্ত হয়ে নটর ডেম কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ জেনারেল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। এমআইএস-সি-তে কলেজছাত্রের মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন হাসপাতালের আইসিইউ জেনারেল ইউনিটের পরামর্শক রায়হান রাব্বানী।

মারা যাওয়া কলেজছাত্রের বয়স ১৭ বছর। তাকে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মারা যাওয়া কলেজছাত্রের পরিচিতজনেরা জানিয়েছে, সে এবার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সন থেকে এসএসসি পাসের পর নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে পরিবারের সঙ্গে থাকত। তাকে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ধারণা করা যাচ্ছে, এমআইএস-সি জটিলতায় দেশে এটাই প্রথম মৃত্যু। এর আগে এই জটিলতায় কারও মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সম্প্রতি এই নতুন অসুস্থতার সঙ্গে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। ২১ বছরের কম বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটাকে পেডিয়াট্রিক ইনফ্লেমটরি মাল্টিসিস্টেম সিনড্রোমও (পিআইএমএস) বলা হয়।

কোভিডের সাধারণ উপসর্গ শ্বাসকষ্ট বা কাশি নেই, এমন শিশুদের মধ্যেও এই জটিলতা দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিডিসি।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা আক্রান্ত অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিল, এমন শিশু-কিশোরদের মধ্যে এমআইএস-সি দেখা যাচ্ছে। কোভিডে আক্রান্ত না হয়েও কোভিড-আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এসে ২১ বছরের কম বয়সীরা এই জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে।

স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ জেনারেলের পরামর্শক ও সেই কলেজছাত্রের চিকিৎসক রায়হান রাব্বানী বলেন, ছেলেটি যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখন হাসপাতালে তার কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। তবে তার দাদার কোভিড শনাক্ত হয়েছিল।

চিকিৎসক রায়হান রাব্বানী বলেন, ‘ছেলেটির মাল্টি অর্গান ফেইলিওর (বিভিন্ন অঙ্গের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছিল। তার হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনি কাজ করছিল না। ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট ছিল। আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম সে এমআইএস-সিতে আক্রান্ত।’

চিকিৎসক রায়হান রাব্বানী জানান, এর আগে স্কয়ারে এমআইএস-সি আক্রান্ত এক শিশু চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে।

দেশে সেপ্টেম্বর মাসে শিশু হাসপাতাল, এভারকেয়ার, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও স্কয়ারে ২৬-২৭ জনের মতো এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এপ্রিল মাসে প্রথমে যুক্তরাজ্য ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকেরা এই এমআইএস-সি শনাক্ত করেন।

বাংলাদেশে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রথম দুই শিশুর এমআইএস-সি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য সিঙ্গাপুর জার্নাল অব কার্ডিওলজি জুন মাসে তাদের সাময়িকীতে তুলে ধরে। এতে জানানো হয়, নিউইয়র্ক সিটি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তাদের ৬৪টি শিশুর এমআইএস-সি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১৫টি শিশু শনাক্ত হয়। পাঁচ ও সাত বছর বয়সী দুটি ছেলেশিশু ৮ মে মারা যায়।

জনস হপকিনসের সাময়িকীতে ২২ মে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের এ সিনড্রোমকে বিরল উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জ্বরের সঙ্গে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, তার মধ্যে রয়েছে অস্বাভাবিক দুর্বলতা ও অবসাদ, লাল ফুসকুড়ি, পেটে ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়া, ঠোঁট লাল হওয়া ও ফেটে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে ওঠা এবং হাত-পা ফুলে যাওয়া। রোগটি এখনো শনাক্তকরণ পর্যায়েই রয়েছে। রোগটি বোঝার জন্য আরও বেশি গবেষণা প্রয়োজন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে বা সংস্পর্শে আসার চার সপ্তাহের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে।

জনস হপকিনস চিলড্রেন সেন্টারের শিশুর সংক্রমণ রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ কেওয়াং সিক কিম শিশুদের মা-বাবার জানার জন্য এমআইএস-সি বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এমআইএস-সি বা পিআইএমএসের কিছু ফিচারের সঙ্গে টক্সিক শক সিনড্রোম (জ্বর, ফুসকুড়ি, বমি, ডায়রিয়া, গাব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ) এবং কাওয়াসাকি রোগের অসুস্থতার মিল রয়েছে। এ দুই ধরনের অসুস্থতায় শরীরের রক্তনালিতে প্রদাহ দেখা দেয়। এ প্রদাহ রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতিসাধন করতে পারে। এটা চিকিৎসায় ভালো হয়। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং অন্যান্য অঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ব্যাপারটি রোধ করতে পারে, বিশেষ করে হৃদ্‌যন্ত্রের। চিকিৎসক কিমের ভাষায়, শনাক্ত করা সম্ভব হলেই এটা চিকিৎসা করা সম্ভব। প্রদাহ কমানো এবং হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন, স্টেরয়েডস এবং প্রদাহ রোধ করে এমন ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেন চিকিৎসকেরা।

Also Read: করোনায় শিশুদের নতুন জটিলতা এমআইএস-সি