Thank you for trying Sticky AMP!!

কোন পথে করোনা

করোনার বিষাক্ত ছোবলে বিশ্বব্যাপী প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এক করোনাই চিরচেনা পৃথিবীর রূপ নিমিষেই বদলে দিয়েছে। এ ভাইরাস পৃথিবী থেকে কবে কখন চিরতরে নির্মূল হবে? করোনার আতঙ্ক থেকে মুক্তি মিলবে কবে? এমন প্রত্যাশিত উত্তরের খোঁজে কোটি মানুষ তাকিয়ে আছে। তবে আমাদের সামনে এখন পর্যন্ত যে উত্তরটি আছে তা ভগ্নহৃদয় ছাড়া আর কিছুই নয়। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)মনে করে, পৃথিবী করোনা থেকে পুরোপুরি মুক্তি কোনোদিনই হয়ত আর হবে না৷ 


দীর্ঘ ছয় মাসে বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী গবেষণা করে এখনো এর কূলকিনারা খুঁজে পাননি। এখনো করোনাভাইরাসের বিষয়ে একেবারেই আশার কথা শোনাতে পারেননি এমনকি ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও করোনা ভাইরাসমুক্ত পৃথিবীর কথা ভাবতে পারছেন না ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞরা। কেননা, হামের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হওয়ার পরও যেমন করে হাম পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়নি, সেভাবে ভ্যাকসিন এলেই করোনা ভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে এমনটি নাও হতে পারে৷


তবে অনেক গবেষক এটাও মনে করেন, হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে ওষুধ বের হয়ে যাবে। প্রাথমিক পরীক্ষায়ও চলছে। এখন কোনো কোনো রোগীর ওপর পরীক্ষা চলছে। ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হলেই করোনার দিন শেষ।…আসলে কি তাই? এমন আশার বাণী শুনতে শুনতে সাড়ে তিন হাত মাটি খোঁড়া শেষ। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতার ওপর এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি বিশ্বে।


দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় কোরিয়া সরকার কিছু কঠোর পদক্ষেপের কারণে সংক্রমণ সংখ্যা কমতে কমতে এক পর্যায়ে ৬ মে মাত্র দু'জনে নেমে এসেছিল। কিন্তু না এই দু'জন থেকে কোরিয়াতে আবার তৃতীয় দফায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। নতুন সংক্রমণের ধারা ইথোয়ান নাইট ক্লাব যা একজন থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন কোভিড-১৯ ক্লাস্টার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান কুরিয়ার সার্ভিস কুপাংয়ের হেড অফিস। বুসানের সেই কুপাং থেকে এখন পর্যন্ত ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মাধ্যমে কুপাংয়ের মোট ৩৫ টি কেন্দ্রের কর্মীদের মাঝে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। করোনার বাস্তব পরিসংখ্যানও ঠিক একই কথা বলছে। যেমনি ভাবে করোনা সেন্টার পয়েন্ট মাঝে মাঝে নতুন আক্রান্তের খবর মিলছে।


এখানেই শেষ নয়, নতুনভাবে বিশেষ করে কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই অনেকের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ফের মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে শতভাগ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার পরও ফের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ভাবিয়ে তুলেছে জনমনে। কোরিয়াতে এমন পুনর্বার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫০ জন। 


অবশ্য কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, করোনা এমন ভয়াবহ রোগ, যার একবার হয়েছে, তার যে আবার হবে না, সে ব্যাপারে কোনো গ্যারান্টি নেই। তাহলে কি সারা বছরই চলতে থাকবে করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ?

নতুন করে করোনাভাইরাসের নমুনায় শক্তিশালী জিনের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। ফলে করোনাভাইরাস আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এটি মানবদেহে আরও বেশি সংক্রমণ ঘটানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে। এতে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যু হার আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ৫টি জিন পাওয়া গেছে। এগুলো হল- এন জিন, এস জিন, ই জিন, আরডিআরএফ জিন এবং ওআরএফ১এবি জিন। এই পাঁচ ধরনের জিনের মধ্যে ওআরএফ১এবি জিন ভাইরাসটির ভিরুলেন্স (রোগ উৎপাদন করার সক্ষমতা) প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।


এখন পর্যন্ত ১৮৮ টি দেশে রাজত্ব করছে করোনা। করোনামুক্ত দেশ গুলো হলো: কিরিবাতি, মার্শাল আইসল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, উত্তর কোরিয়া, পালাউ, সামোয়া, সলোমান আইসল্যান্ড, তোঙ্গা, তুর্কমেনিস্থান, টুভালু, ভানুয়াতু। কারণটা কী? সেখানে করোনা কেন নেই? না থাকার প্রধান কারণ হলো, দেশগুলোর বেশিরভাগই বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র। আবার কয়েকটি দেশে করোনা না থাকলেও ওরা জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। তাহলে এটা পরিষ্কার যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এই ১২টা দেশ আমাদের এ শিক্ষাই দেয়। 
এদিকে প্রিয় মাতৃভূমিতে দীর্ঘ দুই মাস সাধারণ ছুটির পর গতকাল রোববার সীমিত পরিসরে সরকারি অফিস-আদালত চালু হয়েছে। এ জন্য কর্মস্থলের উদ্দেশে পঙ্গপালের মতো ছুটছেন মানুষ। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। এ অবস্থায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আরো বেশি। প্রতিদিনই দেশে রেকর্ড সংখ্যক করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং নতুন নতুন এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।


কিন্তু এই লকডাউনে পুরো অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবতে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১৮৮টি দেশের মধ্যে ৮২টি দেশ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে লকডাউন প্রয়োগ করেছে।


চারদিকে অসহায়ত্ব আর করোনার আতঙ্কের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিই বুঝে এটার স্বাদ কতটা ভয়ানক। পৃথিবীর সব স্বপ্ন যেন বেঁচে থাকার দুঃস্বপ্নের নিচে ছাড়া পড়ে আর্তনাদ করছে। শুধূ বাঁচতে চাই। মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে।