Thank you for trying Sticky AMP!!

একটি 'গিফট বক্স' ও ২১ লাখ ৬২ হাজার ৭১০ টাকা

প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। ছবি: প্রথম আলো

জেনিটরি নামক একটি ফেসবুক আইডির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের এক ব্যবসায়ী যুবকের। নিজেকে আমেরিকান নারী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। সপ্তাহ না পেরোতেই সেই বন্ধু কুরিয়ার সার্ভিসে করে একটি ‘গিফট বক্স’ পাঠান। নারী বন্ধুর সৌজন্যে আপ্লুত বাংলাদেশি এই যুবকের কাছে দুদিন পর একটি অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন আসে। গিফট বক্সটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আছে বলে জানান উইলিয়াম নামধারী এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে ভ্যাটের টাকা পাঠাতে বলেন।

মেহেন্দিগঞ্জের ওই ব্যবসায়ী যুবক গত ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাটারা শাখায় ভ্যাট হিসেবে ৫১ হাজার ২৬০ টাকা পাঠান। জেনিটরি নামক ফেসবুক আইডিটি ছিল একটি ভুয়া আইডি। আদতে ওই যুবকের নামে কোনো গিফট বক্সও আসেনি। কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তাও তাঁকে ফোন দেননি। পুরোটাই ছিল একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। বাংলাদেশে অবস্থানকারী কয়েকজন আফ্রিকান নাগরিকের পরিকল্পিত প্রতারণার খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি। তবে ঘটনাটি ৫১ হাজার ২৬০ টাকাতেই থেমে যায়নি। চক্রটিকে ৯ ধাপে আরও ২১ লাখ ৬২ হাজার ৭১০ টাকা দিয়েছেন এই যুবক।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি জেনিটরি নামক ফেসবুক আইডিটির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল মেহেন্দিগঞ্জের এই ব্যবসায়ীর। তাঁর স্থানীয় রড, সিমেন্টের ব্যবসাও তখন ভালো ছিল। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে চার মাসের ব্যবধানে তাঁকে এখন টাকার জন্য হাত পাততে হচ্ছে বন্ধুদের কাছে। শেষমেশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এপিবিএনের শরণাপন্ন হন তিনি। চক্রের এক প্রতারককে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও দুজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকা মহানগর উত্তর বিভাগ।

গ্রেপ্তার এই তিন আফ্রিকান ব্যক্তি হলেন নেগুগাং টেগোমো বার্টিন (৪৭), নেগুগেং টোসার্জ ক্রিশ্চিয়ান (৩৮) ও একোঙ্গো আর্নেস্ট ইব্রাহিম (৪২)। বার্টিনকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। আর ক্রিশ্চিয়ান ও ইব্রাহিমকে বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এই তিনজনের কারোরই পাসপোর্ট পায়নি সিআইডি। বার্টিন ও ক্রিশ্চিয়ানের পাসপোর্টের ফটোকপি থেকে তাঁরা ক্যামেরুনের নাগরিক বলে জানা গেছে। আর আর্নেস্টো নিজেকে কেনিয়ার নাগরিক বলে পরিচয় দিয়েছেন।

এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন মেহেন্দিগঞ্জের প্রতারিত যুবক। সামাজিকভাবে হেয় হবেন, এই আশঙ্কায় তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিবিএতে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর পরিবার স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও পুরোদমে যুক্ত।

যুবকটি প্রথম আলোকে বলেন, তথাকথিত ভ্যাটের ৫১ হাজার ২৬০ টাকা পাঠানোর পরদিন উইলিয়াম নামধারী ব্যক্তিটি তাঁকে ফোন করে জানান গিফট বক্সটি স্ক্যান করা হবে। মূল্যবার সামগ্রী থাকলে তিনি সমস্যায় পড়বেন। তবে নন-স্ক্যানিং ফি ১ লাখ ২০ হাজার ৪৫০ টাকা দিলে বক্সটি স্ক্যান করা হবে না। পুরো টাকা পাঠানোর পর আবার ফোন দিয়ে জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গিফট বক্সসহ আটক রেখেছে। উপহারের প্রয়োজন নেই বলে জানান ওই ব্যবসায়ী যুবক। তখন উইলিয়াম নামধারী ব্যক্তিটি জানান, বক্সে যুবকের নাম-ঠিকানা লেখা আছে। পুলিশ ঠিকানা ধরে তাঁর খোঁজ করতে পারে।

প্রতারিত ব্যবসায়ী যুবকটি বলেন, উইলিয়াম নামধারী ওই ব্যক্তি তাঁকে জানান, আমেরিকার নাগরিক হওয়ায় অ্যাম্বাসি থেকে যদি তিনি একটি সার্টিফিকেট নিয়ে দেখান, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিফট বক্সটি ছেড়ে দেবে। তবে এ জন্য সার্টিফিকেট ফি হিসেবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই টাকা পাঠানোর পর সার্টিফিকেটের সঙ্গে হাইকোর্টের স্ট্যাম্প লাগবে বলে জানায়। সে জন্য দাবি অনুযায়ী আরও দেড় লাখ টাকা পাঠান যুবকটি। এরপর বিমানবন্দরে আরও কিছু টাকা লাগবে বলে জানালে তিনি আরও ৭০ হাজার টাকা পাঠান। তারপরও গিফট বক্সটির কোনো সন্ধান তিনি পাননি। বরং সোলায়মান নামধারী প্রতারক এই চক্রের আরেক ব্যক্তি তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয় দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। এ সময় বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তিনি টাকা ধার করেন। এরপর তিন দফায় চক্রটিকে তিনি আরও ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা পাঠান। এরপর ২৬ জুন একটি অনলাইন পোর্টালে সিরাজগঞ্জের এক নারীর কাছ থেকে প্রতারক চক্রের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সংবাদ পড়েন তিনি। তাঁর কাছ থেকে যেভাবে টাকা নেওয়া হচ্ছে, অনেকটা সেভাবেই ওই নারীর কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি নিজেও যে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন, সেটা বুঝতে পারেন।

একটি গিফট বক্সের আশায় অপরিচিত ব্যক্তিদের এত টাকা দিয়েছেন কেন, এই প্রশ্নের জবাবে যুবকটি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ভয় তাঁকে দেখানো হয়েছিল, সেটি তাঁকে ভড়কে দিয়েছিল। প্রথম দিকে গিফটের আশায় টাকা দিলেও পরে এই ঝামেলা এড়ানোর আশায় বাকি টাকা দিয়েছেন।

সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক রেজাউল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করছেন। গিফট বক্স পাঠানোর নামে সুকৌশলে তাঁরা এই টাকা হাতিয়ে নেন। চক্রটির বাংলাদেশি সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।