Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রীনিবাসে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ

মেয়ে আনুশকার মৃত্যুতে মা শিউলি বেগমের আহাজারি। গতকাল বিকেলে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের ফৌজিয়া-মতিন পাবলিক স্কুলের ছাত্রীনিবাসে আনুশকা হায়াত বন্ধন (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতাল থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আনুশকা জেলার শ্রীবরদী উপজেলা সদরের পূর্বছনকান্দা গ্রামের আনোয়ার জাহিদের মেয়ে। সে ওই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের সজবরখিলা এলাকায় ফৌজিয়া-মতিন পাবলিক স্কুলের ছাত্রীনিবাসের দোতলার নিজ কক্ষের বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে আনুশকাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক খন্দকার রাহাত মাহফুজ মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে আনুশকার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

আনুশকার পরিবারের অভিযোগ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন ও কী কারণে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়টি জানাতে না পারলেও এ ঘটনার জন্য তার বাবা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

স্কুলের অধ্যক্ষ আবু তাহা সাদী বলেন, ২০১৪ সালে আনুশকা তাঁর বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে স্কুলের ছাত্রীনিবাসের দোতলার একটি কক্ষে থাকত। তার সঙ্গে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির একজন ও শেরপুর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের একজন ছাত্রী থাকত। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আনুশকা তার শ্রেণিকক্ষে যায়। দুপুর ১২টার দিকে কলেজছাত্রী রিয়া ছাত্রীনিবাসের দোতলায় তার কক্ষে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ পায়। এ সময় ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে সে ধাক্কা দিয়ে দরজা খোলে এবং কক্ষের পাখার সঙ্গে আনুশকাকে ঝুলতে দেখে। এ সময় রিয়ার ডাক-চিৎকারে স্কুলের সাত-আটজন শিক্ষক ওই কক্ষে গিয়ে আনুশকাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

সংবাদ পেয়ে সদর থানা-পুলিশ জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে আনুশকার লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় আনুশকার কক্ষ থেকে তার ব্যবহৃত ডায়েরিটি উদ্ধার করা হয়।

জেলা সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে আনুশকার বাবা আনোয়ার জাহিদ অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল সকালেও ফোনে মেয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কিন্তু মেয়ের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা বোঝা যায়নি। আনুশকাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক বিচারের দাবি জানান।

তবে ফৌজিয়া-মতিন পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষ আবু তাহা সাদী বলেন, কেন ও কী কারণে আনুশকার মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কোনো কিছু জানেন না। এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আনুশকার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে গলায় মোটা দাগ দেখা গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।

পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

আনুশকার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে ভিড় করেন। এ সময় মা শিউলি বেগমের আহাজারিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।