Thank you for trying Sticky AMP!!

নারীদের খুন করা ছিল তাঁর অভ্যাস

বাবু শেখ

ঘোরাফেরা করেন মৎস্যজীবীর বেশে। কিন্তু তাঁর শিকারের লক্ষ্য মানুষ। এক এক করে ঠান্ডা মাথায় ২০ জনকে খুন করেছেন। চুরি ও লুট করার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণও করেছেন। তাঁর পছন্দের শিকার মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী। গ্রেপ্তার হওয়ার পর নাটোরসহ চার জেলার আটটি চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

ভয়ংকর এই ব্যক্তির নাম বাবু শেখ (৪৫)। তিনি আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার ওরফে কালু নামেও পরিচিত। গতকাল রোববার নাটোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বাবু শেখ নওগাঁর রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের জাহের আলীর ছেলে। গত শনিবার সন্ধ্যায় নাটোর রেলস্টেশন থেকে তাঁকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। বাবু শেখ গতকাল সন্ধ্যায় নাটোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে সাবিনা পারভিন হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে নাটোর কারাগারে নেওয়া হয়।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম হাফিজ আক্তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সবার আড়ালে–আবডালে থাকা এই ভয়ংকর ব্যক্তি (বাবু শেখ) অভ্যাসগত খুনি। তাঁর অপরাধের সব তথ্যপ্রমাণ এখন পুলিশের হাতে। তাঁকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে এই এলাকার বেশ কিছু হত্যার রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু শেখ ২০টি খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তবে আটটি খুনের সঙ্গে তাঁর সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৯ অক্টোবর রাতে লালপুরের চংধুপইল গ্রামের আনসার সদস্য সাবিনা পারভিন (৩২) ও বাগাতিপাড়ার জয়ন্তীপুর গ্রামের রেহেনা বেগম (৬০) নিজ ঘরে খুন হন। তাঁদের ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা ও মুঠোফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় ১৫ অক্টোবর সিংড়া থেকে রুবেল আলী (২২) নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, সাবিনা পারভিন হত্যার সময় চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের ক্রেতা নাটোর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিটন খাঁকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন নাটোর রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আসাদুলকে (৩৬)। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি (আসাদুল) ওই দুটি খুনের ঘটনার সঙ্গে রুবেল আলী ও বাবু শেখের জড়িত থাকার কথা জানান। সেই সূত্র ধরে শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ বাবু শেখকে নাটোর রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর ভায়রা শাহীন আলীর (৩৫) কাছ থেকে নিহত সাবিনার চুরি হওয়া মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, গ্রেপ্তার বাবু শেখসহ তাঁর সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন কিছু মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে, যার কোনো কূলকিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। বাবু শেখ চংধুপইলের সাবিনা পারভিন হত্যা, জয়ন্তীপুরের রেহেনা বেগম, নাটোরের নলডাঙ্গার বাঁশিলার আমেনা বেওয়া, খাজুরার স্কুলছাত্রী মরিয়ম খাতুন ধর্ষণ-হত্যা, সিংড়ার বিগলগলিয়ার শেফালি খাতুন হত্যা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাঁশতৈল গ্রামের রূপবানু, সখীপুর থানার তক্তারচালা গ্রামের সমলা বেওয়া এবং নওগাঁর সদরের একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন জানান, বাবু শেখ একসময় তাঁর নিজ এলাকাতে চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তখন এলাকার লোকজন তাঁকে গ্রাম থেকে বের করে দেন। সেই থেকে তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে অপরাধ করতে থাকেন।