বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বাজার এলাকা সড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না দিলে মারধর পর্যন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মোকামতলা বাজার সড়ক দিয়ে চলাচল করেন—এমন সাত-আটজন যানচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত মোকামতলা বাজার। বাজারের জয়পুরহাট সড়কের মোড়, বাসস্ট্যান্ড, চৌরাস্তা ও সোনাতলা সড়কের মোড়ে লাঠি হাতে কিছু যুবক দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন। তাঁদের বেশির ভাগই যুবলীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে এলাকায় পরিচিত।
মোকামতলা বাজারে গত শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, বাজার সড়কের মোড়টিতে কোনো যানবাহন আসামাত্রই চাঁদাবাজেরা সেটিকে থামাচ্ছেন। তারপর ‘শীবগঞ্জ উপজেলা অটোরিকশা-অটোভ্যান মালিক সমিতি’র নামে রশিদ দিয়ে চাঁদা দাবি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি পিকআপ ভ্যান থেকে ৫০, ট্রাক্টর থেকে ৫০, ভটভটি থেকে ২০ ও রিকশাভ্যান থেকে ১০-১৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর সিনএনজিচালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে বগুড়ার মধ্যের হলে ১০ আর বাইরের হলে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রশিদে যে সংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে, উপজেলায় ওই নামের সংগঠন নেই।
বাজারের স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সকাল আটটায় মোকামতলা-জয়পুরহাট সড়ক মোড়ে ওই চাঁদাবাজদের কবলে পড়ে দৈনিক করতোয়া পত্রিকার নিজস্ব পরিবহন। চাঁদা না দেওয়ায় আধা ঘণ্টা গাড়িটি আটকে রাখা হয়। পরে সংবাদ পেয়ে স্থানীয় পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে পুলিশ গেলে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি মোকামতলা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সামনে টেপাগাড়ী গ্রামের ভ্যানচালক সাইদুল ইসলামকে (৩৫) গাড়িসহ থামানো হয়। তিনি চাঁদা দিতে না চাইলে মারধর করা হয়।
স্থানীয় এ ভ্যানচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসারই চলে না। চাঁদা দিতে গিয়ে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদা তোলার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তি বলেন, মোকামতলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তাঁদের চাঁদা তুলতে বলেছেন। চাঁদার টাকা তাঁর কাছে দেওয়া হয়।
কিন্তু মাহমুদুল হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাঁরা চাঁদা তুলছেন, তাঁরা শ্রমিক। যুবলীগের কোনো নেতা-কর্মী এর সঙ্গে জড়িত নেই। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মারুফ রহমান বলেন, ‘আমি সব সময়ই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে একাধিকবার উপজেলা পরিষদে মাসিক মিটিংয়ে কথা বলেছি। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের উচিত, দ্রুত এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল বারী বলেন, এলাকার মানসম্মান শেষ হয়ে গেল এসব চাঁদাবাজের কারণে। তাঁরা শ্রমিকের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘গরিবের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বলেছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা।’
এ ব্যাপারে মোকামতলা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক শামীম আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। ছুটি শেষ হলে কথা বলব।’