শিশু চুরি নিয়ে রহস্য!

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার শিশু চুরি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে শাহানাজ বেগম নামে ‘শিশুচোর’ এক নারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হলেও আজ মঙ্গলবার বলা হচ্ছে: শিশু চুরির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অন্যদিকে লিখিত অভিযোগ না করায় শাহনাজ বেগমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর শয্যা থেকে গতকাল সোমবার রাতে দুই মাস বয়সী শিশু উম্মে হাসফিয়াকে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শাহানাজ বেগম (৩০)। ঘটনার পর গতকাল রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির মা শিশুকে কোলে নিয়ে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন। ঘটনা জানতে চাইলে শিশুটির মা আইরিন পারভীন কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ বাচ্চাকে কয়েক দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। রাত আটটার দিকে একজন নারী (শাহানাজ) তাঁর বাচ্চার শয্যার পাশে এসে দাঁড়ান। তিনি ভেবেছেন ওই নারীর বাচ্চাও হয়তো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তিনি ওই নারীকে জিজ্ঞেস করেছেন তাঁর রোগী কোথায়। উত্তরে ওই নারী বললেন, ‘ওই পার’ (পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডে)। এ সময় তাঁর (আইরিনের) মোবাইলে একটি কল আসলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে বাথরুমের দিকে চলে যান। ফিরে এসে দেখেন শয্যায় তাঁর বাচ্চা নেই। এরই মধ্যে বাইরে চিৎকার শুনে দৌড়ে যান। ওয়ার্ডের গেটের কাছে গিয়ে দেখেন এক আনসার সদস্যের (পাহারাদার) কোলে তাঁর বাচ্চা। আর ওই নারীকে সবাই ধরে টানাটানি করছেন। পরে পুলিশ আসলে ওই নারীকে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের উপপরিচালক তৌফিকুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শিশুর মা এবং নানি আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন শিশু চুরির কোনো ঘটনাও ঘটেনি, চুরির চেষ্টাও করা হয়নি। দায়িত্বরত ওয়ার্ড মাস্টার ও ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার আমাদের জানিয়েছেন শিশুটিকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। চুরি করার চেষ্টা করা হলে শিশুটি মারাই যেত।’ গত রাতে শিশুটিকে অক্সিজেন ছাড়াই মায়ের কোলে দেখা গেছে উল্লেখ করলে তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘দেখুন আমি ওই ওয়ার্ডে যাইনি, পরিচালক স্যারও যাননি। ওয়ার্ডে থাকা লোকজন আমাদের এমনটাই জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘যে মেয়েটিকে চোর বলে সন্দেহ করে ধরা হয়েছে সে আসলে হিরোইনখোর।’

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওই শয্যায় শিশুটিকে নিয়ে তার নানি শুয়ে আছেন। নাম জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। শিশুটির মা কোথায় জানতে চাইলেও তিনি চুপ করে থাকেন। পরে নিজ থেকেই বলেন ওঠেন, ‘ওই বাচ্চা নেই, তারা চলে গেছে। আমরা নতুন এসেছি।’ এই শিশুর বাড়ি রাজশাহীর বানেশ্বরে কি না জানতে চাইলে তিনি তাও অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত একজন সেবিকা পাশের শয্যার নিচ থেকে কাঁথা মুড়ি দেওয়া অবস্থায় শিশুর মা আইরিন পারভীনকে ডেকে তোলেন।

আইরিনের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মাফ চাই, আমি কিছু বলতে চাই না।’ গত রাতের কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘কাল যা বলেছি, বলেছি। আজ বলছি আমার বাচ্চা হারায়নি। মাফ চাই, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।’ ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা বলেন, ‘আনসার মিজানুর রহমান নিজেকে ‘হিরো’ সাজানোর জন্য এসব করেছিল। আসলে বাচ্চা চুরি হয়নি।’

এরপর হাসপাতালে খোঁজ করেও আনসার মিজানুর রহমানকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে রাজপাড়া থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) তসলিমা খাতুন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আজ দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দিতে না আসায় শাহানাজ বেগমকে মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’

এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া একটি নবজাতককে গত ১ জানুয়ারি হারানোর চার দিন পর উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হাসপাতালের একজন আয়াসহ চার নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে চার বছরে এই হাসপাতাল থেকে চারটি শিশু চুরি হয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ বছরের গোড়ার দিকে শিশু ওয়ার্ডের গেটে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়।

আরও পড়ুন,
হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির পর উদ্ধার, চোর আটক