Thank you for trying Sticky AMP!!

'মাইরের শব্দ শুনবি, দেখ কেমন লাগে?'

‘মাইরের শব্দ শুনবি, দেখ কেমন লাগে?’ ‘তোরা আসবি তোরাই মাইর খাবি’। এরপরই মারের শব্দ আর এক নারীর আর্তচিৎকার। কথা ও আর্তচিৎকার শোনানো হচ্ছিল মুঠোফোনে। ছোট বোনকে পেটানোর শব্দ ও তাঁর আর্তচিৎকার মুঠোফোনে বড় ভাইকে শোনাচ্ছিলেন বোনের স্বামী।

ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় লালমনিরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাপটানা এলাকায়। ঘটনার শিকার ওই নারীর নাম খুরশিদা আক্তার ইভা (২৩)। ইভার স্বামীর নাম হাছান আল হাবিব (৩৫)। এ বিষয়ে খুরশিদার বড় ভাই বাদী হয়ে হাছানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।

খুরশিদাকে নির্যাতনের সময় তা মুঠোফোনে বড় ভাই হাবিবুর রহমানকে শোনান হাছান। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় নির্যাতনের সময় ধারণ করা এক মুঠোফোন অডিও এখন এলাকার লোকের মুঠোফোনে ছাড়িয়ে পড়েছে। ৪৭ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ওই অডিওতে শোনা যায়, বড় ভাই হাবিবুরকে ভগ্নিপতি হাছান হুমকি দিচ্ছেন। এসব ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছে মারের শব্দ ও খুরশিদার আর্তচিৎকার।

পরিবারের দাবি, নির্যাতনের শিকার খুরশিদা রক্তাক্ত অবস্থায় সেদিন স্বামীর বাড়ি পড়ে থাকলেও উদ্ধার করতে পারছিলেন না এলাকাবাসী কিংবা খুরশিদার বাবার বাড়ির লোকজন। পরে পুলিশের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি কর হয়। খুরশিদার পরিবারের দাবি, যৌতুকের জন্যই খুরশিদাকে এমন নির্যাতন করেছেন হাছান।

বর্তমানে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা আর মানসিক কষ্ট নিয়ে খুরশিদা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে ১৪ মাসের ছেলে। অডিও রেকর্ডটির ব্যাপারে জানতে চাইলে এ সময় কোনো কথা না বলে নীরবে কাঁদতে থাকেন খুরশিদা।

তবে ওই কেবিনে থাকা খুরশিদার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে এই নির্যাতনের অডিওটি প্রচার করে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজরে আনতে অনুরোধ করেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার বোনকে মারপিটের একপর্যায় তাঁর স্বামী ফোন করে আমাকে বোনের আর্তচিৎকার ও মারপিটের শব্দ শোনায়। বোনের আর্তনাদ শুনে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পরেই মাকে নিয়ে লালমনিরহাটের আত্মীয়স্বজনসহ বোনের বাসায় যাই।’

হাবিবুর আরও বলেন, বোনের স্বামীর বাড়ি গিয়ে দেখতে পান খুরশিদা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। তবে হাবিবুরদের আসতে দেখে হাছানের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়ে ওঠেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হাবিবুরদের ওই বাড়ি থেকে বের করে দেন। ফলে খুরশিদাকে তাঁরা এ সময় উদ্ধার করতে পারেননি। পরে পুলিশের সহায়তা নিয়ে খুরশিদাকে উদ্ধার করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার লালমনিরহাট সদর থানায় হাবিবুর বাদী হয়ে হাছানসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বোনের বিয়েতে যৌতুক হিসেবে তিন লাখ টাকা দিয়েছে হাবিবুরের পরিবার। এরপরও আরও দুই লাখ টাকার দাবিতে বিভিন্ন সময় নানাভাবে খুরশিদাকে নির্যাতন করেন হাছান।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বলেন, এ ঘটনায় গত শুক্রবার মামলা হয়েছে, পুলিশ ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

হাছানের সঙ্গে আজ রোববার একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, আবদুস সাত্তারের ছেলে হাছান আল হাবিবের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে খুরশিদা আক্তার ইভার বিয়ে হয়। এই দম্পতির একটি পুত্র সন্তান আছে। স্বামীর নির্যাতনের কারণে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি খুরশিদা।