Thank you for trying Sticky AMP!!

'সেদিন যুদ্ধের মতো শুরু হয়ে গিয়েছিল'

হোলি আর্টিজান

গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার মামলায় আজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক সাদাত মেহেদী। হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাদাত মেহেদী আদালতে বলেন, ‘সেদিন সেখানে যুদ্ধের মতো শুরু হয়ে গিয়েছিল।’

সাদাত মেহেদী ছাড়া আরও তিনজন আজ বুধবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা হলেন সাদাত মেহেদীর স্ত্রী সামিরা আহমেদ, হোলি আর্টিজান বেকারির শেফ আকাশ খান ও আব্দুল হাকিম। আগামী ২৯ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবর রহমান।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক সাদাত মেহেদী আজ আদালতকে বলেন, সেদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বেকারির ব্যবস্থাপক ফোন করে জানান, হোলি আর্টিজান বেকারিতে গোলাগুলি হচ্ছে। তখন তিনি দ্রুত হোলি আর্টিজান বেকারির সামনে চলে আসেন। সেখানে তিনি পুলিশের গাড়ি দেখতে পান। তখন ভেতরে গোলাগুলি চলছে। তাঁর সামনে আহত দুজনকে পুলিশ গাড়িতে করে নিয়ে যায়। সাদাত মেহেদী আদালতে বলেন, কিছুক্ষণ পর পর সেখানে গুলি হচ্ছিল। দুটো বোমা ফাটে। শক্তিশালী বোম ফাটে। তিনি গেটের সামনে ছিলেন। যুদ্ধের মতো শুরু হয়ে গিয়েছিল। সকাল সাড়ে সাতটায় সেনাবাহিনীর বড় বড় গাড়ি আসে।

সাদাত মেহেদী আদালতকে জানান, জঙ্গি হামলায় সেদিন যারা নিহত হন এদের ৫ জনকে তিনি চিনতেন। এর মধ্যে ইতালীয় নাগরিক ছিলেন ৩ জন। তাঁর বেকারির একজন কর্মচারীও মারা যান। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক সাদাত মেহেদীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকর্মী।
আদালত সূত্র বলছে, এ মামলায় ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় গত ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তাঁরা হলেন রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। এঁদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ পলাতক। আর গত শনিবার গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। অন্য একটি মামলায় পুলিশ হেফাজতে আছেন এই আসামি। অপর ছয়জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে গত ২৩ জুলাই পুলিশ আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়। হোলি আর্টিজান হামলার এ ঘটনায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যাঁদের মধ্যে পাঁচজন ওই দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আটজন পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ৭৫টি আলামত পাওয়া গেছে।
হোলি আর্টিজানের হামলার ঘটনায় মোট সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ২১১ জনের। এর মধ্যে ১৪৯ জন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ফরেনসিক টেস্ট যাঁরা করেছেন, তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ। ফলে তাঁকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হোলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হন পাঁচজন। তাঁরা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন আটজন। তাঁরা হলেন তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।