নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ অর্থবিষয়ক সমন্বয়ক মুনতাছির আহম্মেদসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন ইসমাইল হোসেন, আবদুল কাদের ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া। তাঁদের কাছ থেকে দুটি উগ্রবাদী বই, একটি প্রশিক্ষণ সিলেবাস, ৯টি লিফলেট, একটি ডায়েরি এবং চারটি বই উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, সংগঠনটির অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেনের অন্যতম সহযোগী মুনতাছির আহম্মেদ। দুই বছর আগে তিনি সংগঠনে যুক্ত হন।
অর্থবিষয়ক সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি গত ৮–৯ মাসে ভারী অস্ত্র ক্রয়ের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে (পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট–কেএনএফ) ১৭ লাখ টাকা দেন। সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছেন। সাংগঠনিক প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন সময় রাঙামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে যাতায়াত করার তথ্য দিয়েছেন। গ্রেপ্তার ইসমাইল ও আবদুল কাদের হিজরতে (জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশত্যাগ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া) যাওয়া সদস্যদের সার্বিক সমন্বয়ক। জাকারিয়া সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি।
এর আগে ১০ অক্টোবর ঢাকায় র্যাবের সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়ার সদস্যদের পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চলছে। শারক্বীয়া দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণশিবির স্থাপন করেছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর ২০ অক্টোবর সাত জঙ্গি এবং তিন পাহাড়িকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। পরে তারা সেখান থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করে।
জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর আজ শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংগঠনটির দাওয়াতি, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, হিজরতে যাওয়া (জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশত্যাগ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া) সদস্যদের তত্ত্বাবধান করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজেও জড়িত ছিলেন তাঁরা। তাঁরা দুই থেকে চার বছর আগে নিকটাত্মীয়, বন্ধু, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
দেশব্যাপী ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে তাঁরা কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাঁরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁদের সদস্য ও সমমনাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছিলেন। বিভিন্ন সময় পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের টাকা পাঠানোর কাজও করছিলেন তাঁরা। পাশাপাশি পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের পরিবারকে অর্থ পাঠানোর কাজও তাঁরা করছিলেন।
সংগঠনের আমির মাহমুদ সম্পর্কে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তিনি কুমিল্লার একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। প্রায় দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। এক বছর আগে কুমিল্লার প্রতাপপুরে সেমিপাকা বাড়ি এবং জমি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন মাহমুদ। সেই টাকায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি ক্রয় করে পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেখানে চাষাবাদ, পোলট্রি খামার ও গবাদিপশুর খামার পরিচালনা করতেন। ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র মহিলা শাখার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছেন বলেও জানিয়েছেন খন্দকার আল মঈন।