সন্দেহভাজন গৃহকর্মী গতকাল সকালে বাসায় ঢোকেন বোরকা পরে, দেড় ঘণ্টার কিছু সময় পরে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি
সন্দেহভাজন গৃহকর্মী গতকাল সকালে বাসায় ঢোকেন বোরকা পরে, দেড় ঘণ্টার কিছু সময় পরে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে খুন

চার দিনই বোরকা পরে না হয় মুখ ঢেকে এসেছিলেন, তাই গৃহকর্মীর চেহারা পাচ্ছে না পুলিশ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজেদের বাসায় মা-মেয়ে খুন হওয়ার ঘটনায় ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করা নারীকে একমাত্র সন্দেহভাজন মনে করছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত ওই নারীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল সোমবার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার চার দিন আগে বাসাটিতে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন ওই নারী। চার দিনই বোরকা পরে, নয়তো মুখমণ্ডল ঢেকে তিনি বাসাটিতে আসা-যাওয়া করেন। তাই সিসিটিভি ক্যামেরায় তাঁর চেহারা ধরা পড়েনি। খুনের শিকার মা-মেয়ে ছাড়া আর কেউ তাঁর চেহারা দেখেনি। ফলে তাঁর নাম-পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় নিজেদের বাসায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম বাসায় ছিলেন না। স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় ওই গৃহকর্মীকে একমাত্র আসামি করে গতকাল রাতে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন আজিজুল ইসলাম।

গতকাল মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আজ মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, লায়লা আফরোজের পরিবার তাঁকে বলেছিল, তাদের একজন গৃহকর্মী প্রয়োজন। চার দিন আগে এক নারী বাসার সামনে এসে কাজের সন্ধান করলে তাঁকে লায়লার কাছে নিয়ে যান তিনি। ওই নারীর সঙ্গে তাঁর কোনো পরিচয় ছিল না।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় খুন হন লায়লা আফরোজ ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ

স্বজনেরাও জানান, ঘটনার চার দিন আগে ভবনের নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেন লায়লা। গৃহকর্মী সকালে আসতেন এবং কাজ শেষে চলে যেতেন। তাঁর পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা কথা বলে তিনি তাঁর পুরো পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর দেননি।

আজিজুল ইসলাম পেশায় শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় যান। কর্মস্থলে থাকাকালে স্ত্রীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফেরেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত-জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এ অবস্থা দেখে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল উল্লেখ করেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছেন, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মুঠোফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

ঢাকায় খুন হওয়া মা-মেয়েকে নাটোরে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার নবাব সিরাজ–উদ–দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকর্মীর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এখনো বলার মতো অগ্রগতি হয়নি। তবে তদন্ত চলমান।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার মা–মেয়েকে আজ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। বেলা তিনটার দিকে নাটোর নবাব সিরাজ–উদ–দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। দুপুরের আগে তাঁদের মরদেহ এলাকায় পৌঁছালে একনজর দেখতে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাঁরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।