
গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬৫টি অবৈধ অস্ত্র ও ২৯৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। একই সময় হারানো ৯ হাজার ৭৯৪টি অস্ত্র এবং ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫৯টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সেনাসদরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস এ-তে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত এক মাসে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১ হাজার ২৯৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাত, চাঁদাবাজসহ অন্য অপরাধীরা।
মাদকবিরোধী অভিযানে গত এক মাসে রাজধানীর খিলগাঁও, কাফরুল, কলাবাগান, নাখালপাড়া এবং যশোর, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৭৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। একই সময় মাদক সেবন, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট মোট ৫ হাজার ৯৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনী গত ৩, ৬ ও ২৭ আগস্ট সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করে।
হাসপাতাল এলাকায় দালাল চক্র দমনে সেনাবাহিনী গত ২৬ আগস্ট মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের মূল হোতাসহ ৬২ জন দালালকে আটক করে।
ভেজাল প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে গত ১৭ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে ভেজাল প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন প্রতিরোধে গত এক মাসে মানিকগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৯টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছে সেনাবাহিনী। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চার অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম
সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত এক মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট আটটি গোয়েন্দা তথ্যনির্ভর অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬১টি গোলাবারুদ এবং মাদকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। মোট ৩৭ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী গত ২৫ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কুকি ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) একটি সুরক্ষিত প্রশিক্ষণ ঘাঁটি চিহ্নিত ও ধ্বংস করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত এক মাসে প্রায় ৭৫০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন এফডিএমএন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এসব ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ১২ হাজার ইয়াবা, এক কেজি ক্রিস্টাল আইস এবং ১৭ লাখ টাকা মূল্যের সিগারেট, পোশাক, খাবার, প্রসাধনীসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করে। ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫২৯টি গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগ লাঘবে সেনাবাহিনী সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে সর্বদা দেশের জনসাধারণের পাশে থেকে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।