চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গুলিতে নিহত বিএনপির কর্মী মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গুলিতে নিহত বিএনপির কর্মী মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম

বিএনপির কর্মী খুন: এখনো শনাক্ত হয়নি সেই ছয় অস্ত্রধারী

চট্টগ্রামে ব্যস্ততম সড়কে গুলিতে আবদুল হাকিম (৫২) নামে বিএনপির এক কর্মী খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। শনাক্ত হয়নি ছয় অস্ত্রধারীর কেউ। তবে পুলিশ বলছে, তদন্ত অব্যাহত আছে।

এদিকে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক চারজনের মধ্যে তিনজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. নাছিম, মহিউদ্দিন ও আরাফাত হোসেন। খুনের ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে নিহত হাকিমের পরিবার।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের মদুনাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের মাত্র ২০০ মিটার দূরে মোটরসাইকেলে করে এসে একদল অস্ত্রধারী প্রকাশ্যে গুলি করে মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে হত্যা করে। এ সময় তিনি রাউজানের খামার

সাদা গাড়িটিতে করে রাউজান থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন আব্দুল হাকিম। পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে গাড়ি লক্ষ করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা

থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে চট্টগ্রাম শহরে ফিরছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা চালক মুহাম্মদ ইসমাইলও (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন। হাকিমের শরীরে ১০টি গুলির আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া তাঁর ব্যবহৃত গাড়িতে রয়েছে ২২টি গুলির চিহ্ন। গুলিতে গাড়ির সামনের দুটি চাকাও ফুটো হয়ে যায়।

আবদুল হাকিম ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। নানা অনুষ্ঠানে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের সঙ্গে তিনি মঞ্চে থাকতেন। তিনি ভেষজ পণ্যের ব্যবসার পাশাপাশি গরুর খামারি ছিলেন। এ ছাড়া এক বছর ধরে কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলন ব্যবসাও করতেন। রাজনীতিতে তাঁর কোনো দলীয় পদ ছিল না। দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত তিনি।

পাঁচ মাস আগে আমার ভাই কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়ার শিলকের একটি বালুমহাল ইজারা নেন। পাশাপাশি গত বছরের শেষের দিক থেকে রাউজানের নিজ গ্রাম লাম্বুরহাট এলাকায় অন্য একটি বালুমহাল তিনি চালু করে ব্যবসা করছিলেন। এসব নিয়ে বিরোধ হয়েছে কি না, সে রকম কিছু পরিবার জানে না।
মুহাম্মদ পারভেজ

নিহত হাকিমের ভাই মুহাম্মদ পারভেজ বলেন, তাঁরা এখনো কাউকে শনাক্ত কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে সন্দেহ করছেন না। তাই মামলাও করেননি। তবে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে আমার ভাই কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়ার শিলকের একটি বালুমহাল ইজারা নেন। পাশাপাশি গত বছরের শেষের দিক থেকে রাউজানের নিজ গ্রাম লাম্বুরহাট এলাকায় অন্য একটি বালুমহাল তিনি চালু করে ব্যবসা করছিলেন। এসব নিয়ে বিরোধ হয়েছে কি না, সে রকম কিছু পরিবার জানে না। তাই নির্দিষ্ট করে ওই কারণে খুন হয়েছে, সেটিও বলা যাচ্ছে না। আমরা চাই পুলিশ শনাক্ত করুক।’

ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রধারীদের শনাক্তের কাজ চলছে। তারা হেলমেট ও মুখোশ পরা থাকায় একটু সময় লাগছে। শরীরের আকারের সঙ্গে মিললেও দেখা যাচ্ছে চেহারা ভিন্ন। সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করা হলেও তাঁদের মধ্যে তিনজনকে ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কী কারণে খুন হয়েছেন প্রশ্নের উত্তরে কাজী তারেক আজিজ বলেন, ঘটনায় জড়িত আসামি গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে বালুমহাল, রাজনৈতিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব—সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।