Thank you for trying Sticky AMP!!

অর্ধেক দামে বা বিনা মূল্যে পণ্য মেলে যে বাজারে

মানবতার বাজারের ক্রেতা দরিদ্র, নিম্ন আয়ের ও নদী ভাঙনের শিকার মানুষেরা

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বসে ‘মানবতার বাজার’। মাছ, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, লবণ, আলু, মরিচ, লেবু, তেল—সবই পাওয়া যায় এই বাজারে। ক্রেতা দরিদ্র, নিম্ন আয়ের ও নদীভাঙনের শিকার মানুষ। তাঁদের কেউ অর্ধেক দামে এই বাজার থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান। যাঁদের সেটুকুও সংগতি নেই, তাঁরা বিনা মূল্যে পণ্য নিয়ে যান।

৭ মে বাজারটি চালু হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম আবদুল্লাহ বিন রশিদ এই উদ্যোগ নিয়েছেন। বিত্তশালী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক সহযোগিতায় চলে এই বাজার।

প্রতিদিন এই বাজারে ৬০০ থেকে ৭০০ দরিদ্র মানুষ খাদ্যপণ্য নিতে আসেন। প্রথম দিকে বাজারে সব খাদ্যপণ্য অর্ধেক দামে দেওয়া হতো। কিন্তু নদীভাঙন অঞ্চল হিসেবে এখানে আসা বেশির ভাগ মানুষের সেটুকু সংগতিও নেই। তাই যাঁদের টাকা নেই, তাঁদের বিনা মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়।

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। বিভিন্ন পণ্যের আলাদা আলাদা স্টলও রয়েছে। ওই সব স্টলের টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পণ্য। লাইন থেকে একজন একজন করে স্টলে গিয়ে পছন্দের পণ্য ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন। কেউ অর্ধেক দামে আবার কেউ বিনা মূল্যে। তবে বিনা মূল্যে নেওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারী-পুরুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রিয় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ও স্পোর্টিং ক্লাব নামের দুটি তরুণ সামাজিক সংগঠন ব্যবস্থাপনার কাজটি করে।
আছিয়া বেগম নামের মধ্যবয়সী এক মাঠের পাশে বসেছিলেন। স্বামী মারা গেছেন। সন্তানরা কেউ দেখাশোনা করেন না। আগে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। করোনার কারণে সেটাও বন্ধ। বাজারে এসে স্টলগুলোর সামনে যেতে সাহস পাচ্ছিলেন না তিনি। ভয়ে ভয়ে একটি স্টলে গিয়ে জানতে চান, টাকা না থাকলে তাঁকে পণ্য দেওয়া হবে কি না। স্টলের কর্মীরা বিনা মূল্যে সব পণ্য তাঁর ব্যাগে ভরে দেন। এতে তিনি মহাখুশি।

নদীভাঙনে সব হারিয়েছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা সোনাবান। রেললাইনের পাশে একটি জরাজীর্ণ ছাপরায় থাকেন তিনি। এই বাজার থেকে বিনা মূল্যে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু ও একটি বড় মাছ পেয়েছেন। তিনিও বেজায় খুশি।

কেউ অর্ধেক দামে এই বাজার থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান। যাঁদের সেটুকুও সংগতি নেই, তাঁরা বিনা মূল্যে পণ্য নিয়ে যান

অর্ধেক টাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য নিতে পেরে অনেক খুশি রাশেদা বেগমও। এই ধরনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন চালাতে আহ্বান জানান তিনি।

ইসমাইল হোসেন নামের এক দিনমজুর করোনার সময়ে কাজ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘এইখানে থেকে টেহা ছাড়াই চাল, ডাল, আলু ও মাছ নিলাম। ঈদের আগে পুলাপান নিয়ে কইঠা দিন ভালোই চলবে।’

ইউএনও এ কে এম আবদুল্লাহ বিন রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, দাপ্তরিক কাজের বাইরে তিনি কিছু করতে চাইতেন। লকডাউনে মানুষ আর্থিক সমস্যায় আছে। বাজারের চড়া দামে অনেকেই অনেক কিছু কিনে খেতে পারছেন না। তাই তাঁদের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ থেকেই এই উদ্যোগ তাঁর মাথায় আসে।

ইউএনও আরও জানান, প্রতিদিন বাজারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পণ্য সরবরাহ করা হয়। অনেক কর্মকর্তা ও বিত্তশালীরাও হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই উদ্যোগে অন্যান্য উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা ও বিত্তশালীরা সহযোগিতা করলে কর্মহীন মানুষ উপকৃত হবেন।