মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে জাল ভোট ও নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ভোটারদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। তৃতীয় দফায় আজ রোববার উপজেলার ১৩টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, সকালে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ভেলকুমাপুঞ্জির লোকজন স্থানীয় মুরইছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। ফুলতলি এলাকায় পৌঁছালে মুখোশধারী একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্যাট্রিক খংলা ও লুই খংলা নামের খাসিয়া সম্প্রদায়ের দুই যুবক আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আহত যুবকদের পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
বরমচাল ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের 'বিদ্রোহী' প্রার্থী খোরশেদ আহমদ খান অভিযোগ করেন, দুপুর ১২টার দিকে বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে বরমচল ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকেন। এ সময় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর লোকজন তাঁদের ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা প্রায় একটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট বন্ধ থাকে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘটনাস্থলে গেলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র দেবনাথ বলেন, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় প্রায় এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের জোর করে সিল মারার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
বেলা একটার দিকে ভূকশিমইল ইউনিয়নের কানেহাত প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন জোর করে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে যান। এ সুযোগে এক সদস্য প্রার্থী ব্যালটে সিল মারা শুরু করে দিলে কেন্দ্রের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ লোকজনকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জয়ন্ত মালাকার বলেন, ভোট দেওয়া নিয়ে একটু ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে সব ঠিক হয়ে যায়।
বেলা তিনটার দিকে কাদিপুর ইউনিয়নের উচাইল-হোসেনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একটি বুথের সামনে লাইনে বেশ কিছু ভোটার দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা ভোট দিতে পারছিলেন না। ভেতর থেকে তাঁদের জানানো হয়, ব্যালট পেপার নেই। পারভেজ নামের ওই বুথে এক সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট বলেন, দেড় ঘণ্টা ধরে এ অবস্থা চলছে। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল মুহিত বলেন, তিনি ব্যালট পেপারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ওই ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর লোকজন কিছুক্ষণ আগে ওই কেন্দ্রে এসে জাল ভোট দিয়ে গেছেন।
বেলা দেড়টার দিকে জয়চণ্ডী ইউনিয়নের মীরশংকর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দেখা হয় ১১টি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। আমিনুল বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে।