ইংরেজ ক্যাপ্টেন কক্স সাহেবের বাংলো
আপনি কি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামে যাবেন? তাহলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চৌমুহনী স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে দুই কিলোমিটার পথ পার হলেই সেই গ্রাম পেয়ে যাবেন। কেউ যদি জানতে চায়, তাহলে বলবেন, টিনের একটি বাংলোবাড়িতে যেতে চান। যারা জানে না, তাদের কাছে খোলাসা করে বলতে পারেন, বাড়িটি ইংরেজ ক্যাপ্টেন ‘হিরাম কক্স’-এর বাংলোবাড়ি। তারপর বেশ রহস্যময় ভঙ্গিতে ফিসফিস করে বলতে পারেন, ‘বাড়িটির বয়স এখন ২২০ বছর।’ হ্যাঁ, আমরা সেই হিরাম কক্সের কথাই বলছি, যাঁর নামে এখন এই কক্সবাজার জেলা।
১৭৮৪ সালের দিকে আরাকান দখল করে নিয়েছিলেন বার্মার রাজা বোধাপায়া। রাজার আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রায় ১৩ হাজার আরাকানি এদিকে চলে আসে, আশ্রয় নেয় পালংকীতে। বলে রাখি, কক্সবাজারের প্রাচীন নাম কিন্তু পালংকী। সমুদ্র ও জঙ্গলঘেরা পালংকীতে আশ্রিত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে সেখানে নিয়োগ দিয়েছিল। হিরাম কক্স পালংকী এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি বাজার। প্রথম প্রথম এ বাজার ‘কক্স সাহেবের বাজার’ নামে পরিচিত ছিল। পর্যায়ক্রমে ‘কক্স-বাজার’ এবং ‘কক্সবাজার’ নামের উৎপত্তি ঘটে। জায়গাটি ‘প্যানোয়া’ নামেও পরিচিত। ‘প্যানোয়া’ শব্দের অর্থ ‘হলুদ ফুল’। তখন কক্সবাজার হলুদ ফুলের রাজ্য ছিল।
হিরাম কক্স তো দায়িত্ব নিয়েছিলেন শরণার্থী পুনর্বাসনের। কিন্তু তাঁকে তো রাত যাপন করতে হবে, করতে হবে দাপ্তরিক কাজ! এ জন্যই রামুতে নির্মিত হয় এই বাংলোবাড়ি। ১৭৯৯ সালে বাংলোবাড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ক্যাপ্টেন কক্সের মৃত্যু হয়। তাঁর মরদেহ নেওয়ার জন্য চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বড়খালে জাহাজ নিয়ে এসেছিলেন কক্স সাহেবের স্ত্রী ম্যাডাম কক্স পিয়ার। ‘ম্যাডাম কক্স পিয়ার’ লোকমুখে হয়ে যায় ‘মেধাকচ্ছপিয়া’। এখন মেধাকচ্ছপিয়া দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান।
কক্সবাজার শহর থেকে রামুর ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের বাংলোবাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এখানে পেয়ে যাবেন ৫৫ বছর বয়সী বদিউজ্জামানকে। ৩০ বছর ধরে তিনি এই বাংলো পাহারা দিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে যখন বাংলোর চারধারে বেড়াতে বের হবেন, তখন বিস্মিত হবেন জেনে যে এই বাড়িই ২২০ বছর আগে তৈরি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের বাংলোবাড়ি, তা অনেকেই জানে না। এবার নিবিড়ভাবে লক্ষ করলে দেখবেন, এই বাড়ির সঙ্গে যে এ রকম ঐতিহাসিক ঘটনার সংযোগ আছে, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো স্মৃতিফলক নেই। বাংলোটি ‘জেলা পরিষদ বাংলো’ নামে অধিক পরিচিত। দুই ঘরের এই বাংলোতে আছে ব্রিটিশ আমলের একটি খাট, চেয়ার-টেবিল। এই বাংলোয় কেউ রাত যাপন করতে চাইলে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি রাতের জন্য ২০০ টাকা, পর্যটকদের জন্য ৪০০ টাকা দিতে হয়।
বেসরকারি নাগরিক সংগঠন ‘সিভিল সোসাইটিজ ফোরাম-কক্সবাজার’–এর সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যদি দেখা হয় আপনার, দেখবেন তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, ‘২২০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাংলোটি অযত্ন–অবহেলায় পড়ে আছে। বাংলোর ছাউনি পরিবর্তন ছাড়া এ পর্যন্ত ঘরের সংস্কার হয়নি। টাঙানো নেই হিরাম কক্সকে নিয়ে কোনো সাইনবোর্ড কিংবা স্মৃতিফলক। বাংলোটি ‘হিরাম কক্স–এর বাংলোবাড়ি’ হিসেবে খ্যাত হলে রামুর পর্যটনে যোগ হবে নতুন মাত্রা।’
কথাটা আপনারও ঠিক বলে মনে হবে।
আরও পড়ুন
-
কী ঘটেছিল, মনে করতে পারছে না শিশুটি
-
অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল, অভ্যুত্থানেই পুরো পরিবারসহ খুন হন আফগান প্রেসিডেন্ট দাউদ খান
-
বাসা থেকে বেরিয়েই সালাহউদ্দিন বুঝলেন, এই গরমে ফুটবল খেলা সম্ভব নয়
-
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলন্ত বাসের নিচে মোটরসাইকেল, এরপর দাউ দাউ আগুন
-
প্রযোজকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাঙালি অভিনেত্রীর