মৌলভীবাজারে বিলুপ্তপ্রায় ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ শকুনের দেখা মিলেছে। অনেক দিন পর মৃত গরুর মাংস খেতে শকুনের একটি ঝাঁককে গ্রামের মাঠে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে শকুনের এমন দৃশ্য পুরোনো হলেও অনেক বছর দলবেঁধে শকুনের ঘুরে বেড়ানো চোখে পড়ে না। সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার-সংলগ্ন আটঘর গ্রামের মাঠে পরপর তিন দিন শকুনের ঝাঁক দেখা গেছে। একটি ঝাঁকে সর্বোচ্চ ১৮টি শকুন ছিল।
প্রকৃতিতে প্রায় হারিয়ে যাওয়া একটি প্রাণী শকুন। দুই দশক আগেও ঝাঁকে ঝাঁকে শকুনের দেখা মিলত। কোথাও মৃত গবাদিপশু ফেলে দিলে শকুন এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছে। অনেক বছর সেভাবে শকুনের দেখা মেলে না। মাঝে মধ্যে দু-একটা শকুন চোখে পড়লেও সেগুলো বাংলা শকুন। এ ছাড়া দেশে শীতকালে পরিযায়ী দু-একটা ক্লান্ত হিমালীয় শকুন বা হিমালয়ান গ্রিফন দেখা যায়।
আটঘর মাঠে শকুন আসার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার। কিন্তু মাঠে কোনো শকুন দেখতে না পেয়ে তাঁরা কিছুটা হতাশ হন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ফেরার সময় গ্রামের একটি বড় শিল কড়ই গাছে বিশ্রাম নেওয়া পাঁচটি শকুনের দেখা পান।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, আটঘর গ্রামে পরপর দুটি গবাদিপশু মারা যায়। সেগুলো মাঠের পতিত জমিতে ফেলে রাখা হয়। সেই মাংস খেতে শকুনের দল ছুটে আসে। প্রথম দিন ৩১ মে ১০ থেকে ১১টি শকুন আসে। পরের দিন ১ জুন সর্বোচ্চ ১৮টি শকুন দেখা যায়। ২ জুন দেখা মেলে পাঁচটির। এদিন গ্রামের একটি বাড়ির উঁচু গাছে বসেছিল শকুনগুলো।
আটঘর গ্রামের শামছুল হক বলেন, প্রতিবছরই গ্রামে গবাদিপশু মারা যায়। মৃত পশুগুলো পতিত জমিতে ফেলা হয়। মাঝেমধ্যে শকুন আসে। শকুন না আসলে শিয়াল-কুকুরে খায়। তখন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। শকুনে খেলে একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। ১ জুন তিনি একসঙ্গে ১১টি শকুন দেখেছেন।
পরপর তিন দিন এক জায়গায় এত শকুনের উপস্থিতিকে প্রকৃতিতে শকুন ফিরে আসার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁদের ধারণা, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়াশ্রম থেকে এই শকুনের ঝাঁক আসতে পারে। রেমা-কালেঙ্গা শকুনের প্রজনন ও বিশ্রামস্থল। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের দেওরাছড়া, কালাছড়া, মাধবপুর ও করিমপুরেও শকুনের প্রজনন ও আশ্রয়স্থল আছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে প্রায় ১০০ বাংলা শকুন আছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেটের কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক বছর ধরে একসঙ্গে এত শকুন দেখা যায় না। তিন দিন ধরে এক জায়গায় শকুন আসছে। এটা প্রকৃতিতে শকুন ফেরার লক্ষণ। গ্রামের একটি উঁচু গাছে শকুনগুলোকে বিশ্রাম নিতে দেখেন তিনি।