
একমাত্র মেয়ে সামিয়া (৯) ও মেজ ছেলে সায়েম (৬) বাকপ্রতিবন্ধী। বড় ছেলে সিয়াম (৮) ও ১১ মাস বয়সী আরিফসহ চার সন্তানকে রেখে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার হাতিমারা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সিন্দুরিয়াপাড়ায় মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী সাইফুলসহ পাঁচজন নিহত হন।
দুর্ঘটনায় বুড়িচং উপজেলার কংসনগর গ্রামের ফল ব্যবসায়ী দুই চাচাতো ভাই শাহজালাল খান ও আলমগীর খানও নিহত হয়েছেন। ওবায়দুল (৮) ও জান্নাত (৬) নামের দুই সন্তান রয়েছে শাহজালালের। আলমগীরের রয়েছে ঝুমা আক্তার নামের দুই বছরের এক কন্যাসন্তান। উপার্জনক্ষম তিন পরিবারের তিন ব্যক্তিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় পরিবারগুলো। সান্ত্বনা দিতে আসা স্বজনদের প্রশ্ন—কী হবে গরিব পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েগুলোর?
এ ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ দুপুরে পরিবারগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ নেওয়ার পর কান্নার রোল পড়ে যায়। ছোট ছোট শিশুকে জড়িয়ে চলে একের পর এক বিলাপ।
ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে কুমিল্লামুখী একটি অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় যাচ্ছিল। বুড়িচংয়ের সিন্দুরিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছানোর পর অটোরিকশাটির পেছন দিক থেকে একটি ড্রাম ট্রাক প্রথমে ধাক্কা এবং পরে চাপা দেয়। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে অটোরিকশাচালক জুলহাস মিয়া (৬০), অটোরিকশার যাত্রী সাইফুল ইসলাম (৩৩), জহিরুল ইসলাম (৩৫), শাহজালাল খান (৩৭) ও আলমগীর খান (২৭) নিহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তত্পরতা চালানো হয়। এ ঘটনায় ট্রাকটি জব্দ করা সম্ভব হলেও ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছেন। পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়।
শাহজালালের বড় ভাই জামাল খান বলেন, ‘শাহজালাল ও আলমগীর চাচাতো ভাই। শাহজালাল আমার আপন ছোট ভাই। ওরা কংসনগর বাজারে ফলের ব্যবসা করে। কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় যাওয়ার জন্য কংসনগর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠে। সেখান থেকে বাসে ঢাকায় ফল কিনতে যাওয়ার কথা ছিল। ওদের আর ফল আনা হলো না।’ শাহজালালের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ‘এখন আমার কী হবে? কোথায় যাব?’
বাস কন্ডাক্টর সাইফুলের স্ত্রী রুবি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সাইফুল সকালে বাড়ি থেকে বের হলো শাসনগাছা বাস টার্মিনালে যাবে বলে। সে তিশা বাসের কন্ডাক্টর ছিল। আমার অবুঝ সন্তানদের এখন কী হবে।’ সাইফুলের মা আয়েশা বিবি (৬০) বলেন, ‘দুইটা নাতি–নাতনি কথা বলতে পারে না। ছোট ছোট চার বাচ্চা ওর। কেমনে ওদের বাঁচাব। আমি ওই ট্রাকচালকের বিচার চাই।’