রংপুরের গঙ্গাচড়া

কুমড়াখেতে মোজাইকের আক্রমণ, চিন্তিত কৃষক

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পুর্বমহিপুর চরে মোজাইক ভাইরাসের আক্রমণে কুমড়া খেতের পাতা হলুদ হয়ে গেছে
প্রথম আলো

এক দিনের বন্যায় মিষ্টিকুমড়াখেত বালু চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যায় চাষিদের। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় তাঁরা আবার তিস্তার বিভিন্ন চরে মিষ্টিকুমড়ার বীজ বপন করেন। এবার সে কুমড়াখেতে আক্রমণ করেছে মোজাইক ভাইরাস। খেতে কীটনাশক প্রয়োগেও কাজ না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চরে ২৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৫০০ চাষি মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন। মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত গাছের পাতায় দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার রং হলদে হয়ে যায়। পাতা আকারে ছোট এবং অনিয়মিত হয়ে যায়। কচি পাতা সরু হয়ে কুঁচকে এবং খসখসে হয়ে যায়। অনেক সময় ফলের চেহারাও খারাপ হয়ে যায়। রোগাক্রান্ত গাছপালা ছোট থাকে এবং ফলন কম দেয়।

চাষিরা বলেন, তিস্তার চরে লাগানো মিষ্টিকুমড়াগাছে ফুল ও ফল ধরেছে। অনেকে খেত থেকে কুমড়া তোলাও শুরু করেছেন।

এ অবস্থায় ১৫-১৬ দিন থেকে কিছু গাছের পাতায় ছোপ ছোপ দাগ দেখা যাচ্ছে। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে খসখসে ও হলদে রঙের হয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগেও কাজ হচ্ছে না। দ্রুত এ রোগ পুরো খেতে ছড়িয়ে পড়ছে।

গত সোমবার পূর্ব মহিপুর চরের বাসিন্দা আবুল হোসেন (৪০) বলেন, গত বছর জুলাইয়ের প্রথম দিকে চরের আড়াই একরে তিনি মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেন। কিন্তু অক্টোবর মাসে হঠাৎ বন্যায় তাঁর কুমড়াখেত ডুবে যায়। পানি নামার পর দেখেন বালুচাপা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে খেত। পরে আবার তিনি মিষ্টিকুমড়ার চারা লাগান। স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে এ খরচ জোগান দিয়েছেন। বর্তমানে সেই কুমড়াখেতের পাতা হলদে হয়ে গেছে। ছয় দিন আগে তিনি খেতে কীটনাশক প্রয়োগ করলেও রোগ দমন হচ্ছে না।

কুমড়াখেত নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছেন চরছালাপাক, কালিচর, চব্বিশ সাল, চর মহিপুর, পশ্চিম ইচলী, মধ্যইচলী, বিনবিনা, জয়রামমোঝা, নোহালী, কোলকোন্দ, সিংগীমারি, গান্নারপাড় ও লক্ষ্মীটারী গ্রামের চাষিরা।

চরছালাপাকের চাষি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আড়াই একর জমির কুমড়া এক দিনের বন্যাত ভাসি গেইছে। ফের ধারদেনা করি ওই জমিত কুমড়া নাগাছু। গাছোত ফুল ফল ধরছে। গাছ দেখি মনে হছলো এবার ভালোয় লাভ হইবে। এ্যালা সউগ শ্যাষ। গাছের পাতা কোঁকড়া নাগি শুকি যাওচে। ওষুধ দিয়াও কাম হওচে না।’

রাজবল্লব গ্রামের মিলন মিয়া বলেন, তিনি চার একর জমিতে কুমড়া লাগিয়েছেন। এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ির গরু বিক্রি করে তিনি খরচ জোগান দিয়েছেন। বর্তমানে পুরো খেতে আক্রমণ করেছে ভাইরাস। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ না হওয়ায় এখন তিনি দিশাহারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, চরের কুমড়াখেতে আক্রমণ করেছে মোজাইক ভাইরাস। সাধারণত এ ভাইরাস

বীজ থেকে ছড়ায়। ছোট আকৃতির ফড়িংও রোগ ছড়াতে সাহায্য করে। জাব পোকা এ রোগের অন্যতম বাহক। পাতায় আক্রমণ করে রোগটি।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত গাছ খেত থেকে তুলে ফেললেই রোগ অনেকটা দমন হয়। ভাইরাসজনিত এ রোগ কৃষিশ্রমিক এবং খেতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম দ্বারাও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই কৃষকদের সচেতনতা অবলম্বন ছাড়া রোগ দমন করা সম্ভব নয়।