
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় ধনু নদের পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করায় কীর্তনখোলাসহ প্রায় সব ফসল রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিও অনেকটা কমে গেছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, নদের খালিয়াজুরী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় অতিঝুঁকিপূর্ণ কীর্তনখোলাসহ অন্য বাঁধগুলো অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত।
পাউবো ও স্থানীয় কয়েক কৃষককের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় চলে আসে। পানির প্রবল চাপে খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে চাপ বেড়ে যায়। ৩ ও ৪ এপ্রিল মদনের ফতেপুর হাওর, খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওর, চুনাই হাওর, বাইদ্যার চর, কাটকাইলের কান্দা, বৈলং হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
এ ছাড়া লেপসাই হাওর, চৈতারা হাওর, মায়েরচর হাওর, আসাদপুরের আশাখালী হাওর, পায়া হাওর, দৈলং সাপমারা হাওর, পুটিয়া হাওর, ছাতিয়াসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থান হুমকিতে পড়ে। এসব বাঁধের অনেক অংশে ধস ও ফাটল দেখা দেয়। তবে পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষকদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোতে সংস্কারকাজ চালায়। এতে এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি।
তবে গত বুধবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এতে অনেক খেতের ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। খালিয়াজুরীর পুরানহাটি এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, তিনি কীর্তনখোলা হাওরে ১০০ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। বাঁধের বাইরে বন্যার পানিতে প্রায় ১০ একর জমির ধান ডুবে গিয়েছিল। পানি নেমে যাওয়া মাত্রই তিনি আধা পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন। এর মধ্যে তিনি ছয় একর জমির আধা পাকা ধান কেটে ফেলেছেন। এতেই তিনি খুশি।
একই গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পানি কমে যাওয়ায় আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। কীর্তনখোলাসহ প্রায় সব বাঁধ এখন ঝুঁকিমুক্ত। বৃষ্টি না হলে আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ৮০ ভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারব।’
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কীর্তনখোলা বাঁধের অতিঝুঁকিপূর্ণ ৫ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ চান তাঁরা। ফোল্ডার-২–এর অধীন ৫৫ কিলোমিটার ওই বাঁধের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মাত্র ৫ কিলোমিটার। ওই অংশে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া গেলে কৃষকেরা অনেকটাই নির্ভার থাকবেন।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল বলেন, কীর্তনখোলা বাঁধের অতিঝুঁকিপূর্ণ ৫ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এ নিয়ে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ৫ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পানি কমে যাওয়ায় কৃষকেরা বাঁধের বাইরে ডুবে যাওয়া অনেক খেতের ধান কাটতে শুরু করেছেন। এতে ক্ষতির পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কমে যাবে। আশা করা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হবে।