সিলেটে বন্যা

খিচুড়ি প্রিয় হলেও দুই সপ্তাহে চোখেও দেখেনি শিশু তাহিয়া

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার করগ্রামের সুরমা প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে রুমানা বেগম ও তাঁর দুই সন্তান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

শিশু তাহিয়া আক্তারের বয়স দুই বছর হতে আরও চার মাস বাকি। বুকের দুধের পাশাপাশি খিচুড়ি তার পছন্দের খাবার। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে খিচুড়ি সে চোখেও দেখছে না। বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় পরিবারের সঙ্গে তাহিয়াও আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়। আকস্মিক বন্যায় আয়হীন হয়ে পড়ায় তাহিয়ার পরিবার পড়েছে খাবারের সংকটে। এর প্রভাব পড়েছে তাহিয়ার খাবারদাবারেও।

তাহিয়ার বাবা আলী আহমদ (৩০)। পেশায় কাঠমিস্ত্রি আলীর বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার করগ্রামে। আলীর স্ত্রী রুমানা বেগম (২৫) গৃহিণী। আলী-রুমানার দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে তাহিয়া, বড় মেয়ে মুনতাহা আক্তার (৫)। ১৫ জুন বন্যায় ঘরে কোমরপানি দেখা দিলে দুই মেয়েকে নিয়ে আলী-রুমানা করগ্রামের সুরমা প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। পানি না কমায় এখনো তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রেই আছেন।

রুমানা বেগম জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে মাঝেমধ্যে খিচুড়ি অথবা রান্না করা খাবার স্থানীয় লোকজন সরবরাহ করে থাকেন। এসব খাবার ছোটদের খাওয়ার অনুপযোগী। এ অবস্থায় বিকল্প না থাকায় তাঁদের বড় মেয়ে মুনতাহাকে বড়দের খাবার খাওয়ালেও তাহিয়াকে সেসব খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাই বুকের দুধই তাহিয়ার ভরসা। এ অবস্থায় চার দিন আগে তাহিয়ার ডায়রিয়া দেখা দেয়। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে স্বল্প টাকায় কিছু ওষুধ কিনে এনেছিলেন। এখন তা-ও শেষ। তবে একজনের দেওয়া খাবার স্যালাইন তাহিয়াকে খাওয়াচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, তিনতলাবিশিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রের পাঁচটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকছে ১৭টি পরিবারের ৫৯ জন বানভাসি মানুষ। এর মধ্যে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেঞ্চ পেতে চাদর বিছিয়ে থাকার জায়গা করেছে তাহিয়ার পরিবার। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাহিয়া বারবার কান্না করছিল। অন্যদিকে বন্যার এক সপ্তাহ আগে কান ফুটো করায় মুনতাহাও ব্যথা নিয়ে ছোট বোনের পাশে বসে আছে।

রুমানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, চারপাশ বন্যায় প্লাবিত থাকায় মুনতাহা-তাহিয়ার বাবা আয়হীন হয়ে পড়েছেন। টাকার অভাবে রুমানাকে ভালো চিকিৎসক দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। একই কারণে ওষুধও ঠিকমতো কিনতে পারছেন না। এমনকি শিশুসন্তানদের মুখে ভালোমন্দ খাবারও দিতে পারছেন না। বন্যার পানিতে তাঁদের ঘরটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাপরবর্তী আর্থিক সংকট কীভাবে দূর করবেন, সে চিন্তাতেই এখন তাঁরা অস্থির।