Thank you for trying Sticky AMP!!

গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে দুই পায়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন মাতবরেরা

জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিকশাচালক তোতা মিয়া

জয়পুরহাটে গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করতে এক রিকশাচালককে বেধড়ক মারপিটের পর দুই পায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যসহ গ্রাম্য মাতবরদের এমন কাণ্ডে ওই রিকশাচালকের দুই পায়ের ঊরুর নিচ থেকে ঝলসে গেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে আজ রোববার ভোররাতে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে নির্যাতিত রিকশাচালকের স্ত্রী বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রফিকুল ইসলামকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে। ভুক্তভোগী রিকশাচালকের নাম তোতা মিয়া (৩০)। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার ধারকি পাথারপাড়ায়।

স্থানীয় লোকজন ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকি গ্রামের বাসিন্দা উপেন পাহান ঘাস খাওয়ার জন্য তাঁর একটি গরু গ্রামের মাঠে বেঁধে রেখে আসেন। ওই দিন বেলা দুইটার পর উপেন পাহান মাঠে গিয়ে তাঁর গরুটি আর পাননি। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ওই দিন দুপুর ১২টার পর রিকশাচালক তোতা মিয়াকে মাঠটি দিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। গরু চুরি জন্য তোতা মিয়াকে সন্দেহ করা হয়।

এরপর গতকাল শনিবার গভীর রাতে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামসহ গ্রামের মাতবরেরা রিকশাচালক তোতা মিয়ার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ধরে নিয়ে যান। এরপর তোতা মিয়াকে বাড়ির পাশের একটি জমিতে এনে বেঁধে রেখে বেধড়ক মারপিট করেন তাঁরা। ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামসহ গ্রাম্য মাতবরেরা তাঁর কাছে থেকে গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চালান। তোতা মিয়া বারবার গরু চুরির কথা অস্বীকার করছিলেন। তখন গ্রাম্য মাতবরেরা ক্ষিপ্ত হয়ে তোতা মিয়ার দুই পায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দেন। এতে তোতা মিয়া দুই পায়ের ঊরুর নিচ থেকে ঝলসে যায়। তোতা মিয়া ব্যথায় ছটফট করতে থাকেন। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে গ্রাম্য মাতবরেরা তাঁকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান।

তাঁর দুই পায়ে কোনো দাহ্য পদার্থ ঢেলে দিয়ে তাতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। আগুনে তাঁর দুই পা ঝলসে গেছে।
নুর আসাদুজ্জামান, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল

আজ রোববার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তোতা মিয়া পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর দুই পায়ে ব্যান্ডেজ। তোতা মিয়া বলেন, ‘ওরা আমাকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে ধরে আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। গরু চুরির কথা স্বীকার না করায় আমার দুই পায়ে দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে আগুন দিয়েছে। আমার দুটি পা ঝলসে গেছে।’

তোতা মিয়ার স্ত্রী ডলি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে সাংসার চালান। ইউপি সদস্য ও গ্রাম্য মাতবরেরা আমার স্বামীকে গরুচোর সন্দেহে ধরে এনে বেধড়ক পেটানোর পর দুই পায়ে আগুন দিয়েছে। আমি এই নির্মম নির্যাতনের বিচার চাই।’

জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নুর আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তোতা মিয়াকে রোববার ভোরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর দুই পায়ে কোনো দাহ্য পদার্থ ঢেলে দিয়ে তাতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। আগুনে তাঁর দুই পা ঝলসে গেছে।

জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা সাংবাদিকদের বলেন, এক ব্যক্তির গরু চুরির ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয় ব্যক্তি রিকশাচালক তোতা মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে এনে গাছে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করেন। এরপর তাঁরা তোতা মিয়ার লুঙ্গিতে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।