
রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর করোনাভাইরাসের নতুন কেন্দ্রভূমি হতে চলেছে গাজীপুর। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে শিল্প–অধ্যুষিত এই জেলার সর্বত্র। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। এক সপ্তাহ আগেও সংক্রমণ ছিল মাত্র ৩৫ জন, আর গতকাল রোববার পর্যন্ত গাজীপুরে সংক্রমণ হয়েছে ১৭৩।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, গতকাল পর্যন্ত গাজীপুরে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে ১৭৩ জন। এই সংখ্যা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় ৩৬ জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৬৩ জন, কালীগঞ্জে ৪৪ জন, শ্রীপুরে ১৪ জন ও কালিয়াকৈরে ১৬ জন। করোনাভাইরাসটি এ পর্যন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে একজনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন চিকিৎসক, ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ৫ জন পুলিশ সদস্য ও ১ জন সংবাদকর্মীও আছেন। তবে এ পর্যন্ত এ জেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ২২৪ জনের।
১১ এপ্রিল পুরো গাজীপুরে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু লকডাউন তেমন মানছে না মানুষ। বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলে দলে মানুষ জড়ো হচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। জেলার কয়েকটি শিল্পকারখানা এখনো বন্ধ হয়নি। আবার অনেকে আতঙ্কে ট্রাক-পিকআপ, অটোরিকশা বা হেঁটে যে যেভাবে পারছে গাজীপুরের ওপর দিয়ে চলাফেরা করছে। এতে দেশের অন্য এলাকায় ভাইরাসটি আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি নতুন করে গাজীপুরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে লকডাউন আরও কঠোর করার পরামর্শ দিয়েছেন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ১৬ মার্চ এক ইতালিপ্রবাসীর শরীরে। ইতালি থেকে ১৪ মার্চ দেশে ফিরে তিনি গাজীপুরের পুবাইলে মেঘডুবি মা ও শিশুকেন্দ্রে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ওই ব্যক্তির বাড়ি নরসিংদীতে। ২৯ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বারবৈকা এলাকায় দ্বিতীয় ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। তিনি ইতালিপ্রবাসী আত্মীয়ের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১০ এপ্রিল ৪ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হলে জেলায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
১৩ এপ্রিল পর্যন্ত গাজীপুরে আক্রান্তে মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫। এক দিন পরই গত মঙ্গলবার ওই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩ জন, বুধবার দাঁড়ায় ৬২, বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ৮২, শুক্রবার দাঁড়ায় ১৪৭, শনিবার দাঁড়ায় ১৬০ ও সর্বশেষ গতকাল দাঁড়ায় ১৭৩ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সংবাদকর্মীও রয়েছেন। তার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসক আছেন ছয়জন। গাজীপুরের তেঁতুইবাড়ি এলাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের আছেন তিন চিকিৎসক এবং কাপাসিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন। গাজীপুরের গাছা থানার পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা, এ ছাড়া গাজীপুরের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক ও তাঁর ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা সবাই হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।