Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্যাস-সংকটে মানিকগঞ্জের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ গুনছেন শিল্পমালিকেরা।

গ্যাস-সংকটে মানিকগঞ্জের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে শিল্পমালিকদের।
জেলার সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রাইজিং স্পিনিং মিল। জেলার অন্যতম বৃহৎ এই কারখানায় সুতা ও কাপড় তৈরি করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাটিতে জেনারেটর চালাতে সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে তিতাস গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। গ্যাস-সংকটের কারণে সচল রাখতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। কারখানাটির উৎপাদন বিভাগের হিসাবমতে, গত মে মাসে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা গ্যাসের বিল পরিশোধের পরও ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাসে গ্যাসের বিল ১ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা দেওয়ার পরও ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে কারখানার মালিককে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।

কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো. কলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গ্যাসের চাপ পাঁচ পিএসআই প্রয়োজন। তবে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক পিএসআই। গ্যাসের এত কম চাপের কারণে জেনারেটর চালু রাখতে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে কারখানার মালিকের প্রতি মাসে গড়ে ৫০ লাখ টাকা বেশি অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে।


জেলার একাধিক শিল্পকারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের সংকট চলছে। দুই মাস ধরে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকে না। রাত ১২টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত মাত্র পাঁচ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ থাকে, তবে তা সীমিত। গ্যাসের এ সংকটে অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে। এ সামান্য উৎপাদন দিয়ে শ্রমিকের মজুরিসহ ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে গ্যাসের সংকট চলতে থাকলে কারখানাগুলো টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। কোনো কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।

জেলা তিতাস গ্যাস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়া থেকে সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঢাকার ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর থেকে আরিচা পর্যন্ত মানিকগঞ্জের তিতাস গ্যাসের আওতাভুক্ত এলাকা। এ জেলায় ১ হাজার ২৪২টি আবাসিক, ৩৩টি বাণিজ্যিক, ৭১টি শিল্পকারখানা এবং ১৯টি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস–সংযোগ রয়েছে।

গ্যাসের এত কম চাপের কারণে জেনারেটর চালু রাখতে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে কারখানার মালিকের প্রতি মাসে গড়ে ৫০ লাখ টাকা বেশি অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে।
মো. কলিম উদ্দিন, উপমহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন), রাইজিং স্পিনিং মিল


জেলা সদরের গিলন্ড এলাকায় মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বাবুল হোসেন বলেন, গ্যাস-সংকটে কারখানাটির উৎপাদন নিম্নস্তরে নেমেছে। এ পরিস্থিতিতে কারখানার উৎপাদন চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। লোকসানের মধ্যেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, বিসিকে ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে। অধিকাংশ কারখানায় গ্যাসের প্রয়োজন। তবে গ্যাস-সংকটে কারখানাগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ সমস্যা সমাধান না হলে শিল্পে বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
বিসিকে অবস্থিত সুপার সাইন কেব্‌ল নামের কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) উত্তম ভৌমিক বলেন, ‘প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৫ ঘণ্টা গ্যাস মিলছে। বাকি ১৯ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ নেই। এই সামান্য গ্যাস দিয়ে কীভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকবে? কীভাবে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে? কীভাবে শিপমেন্ট করব?’

গ্যাস-সংকটের বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতিকুল হক সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজারে তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক ফিরোজ কবিরের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।


কথা হলে ফিরোজ কবির বলেন, সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে ট্রান্সমিশন কোম্পানি প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় মানিকগঞ্জে গ্যাস-সংকট রয়েছে। বিষয়টি তিতাসের পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে মানিকগঞ্জে বিকল্প একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মানিকগঞ্জে গ্যাসের সংকট থাকবে না।