Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেঁড়াদিয়া যেতে মানা করায় সেন্ট মার্টিনে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

সেন্ট মার্টিনে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলায় রোববার সকাল থেকে সার্ভিস বোটগুলো এভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে

পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ছেঁড়াদিয়া যেতে মানা করার প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল থেকে পর্যটনকেন্দ্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সেন্ট মার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতি, স্পিডবোট, গামবোট, ইজিবাইক (টমটম), ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল, দোকানপাট, বাজার কমিটি, হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি ও স্থানীয় জনসাধারণ।

আজ বিকেলে সেন্ট মার্টিনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, আজ সকাল থেকে কোস্টগার্ডের সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদিয়া যেতে মানা করার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনসহ স্থানীয় জনসাধারণ। পুরো দ্বীপে শনিবার বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাকে মাইকিং করা হয়েছে।

এদিকে শনিবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে এসে রাত্রিযাপন করা প্রায় দুই হাজারের বেশি পর্যটক ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে পর্যটকদের খাবারের জন্য শুধু খাবার হোটেল চালুর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

কোস্টগার্ড সেন্ট মার্টিন স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা আমরা শুধু বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। কয়েক মাস আগে থেকে ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটক যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু পর্যটক আমাদের অগোচরে সেখানে যেতেন। এখন কড়াকড়ি আরোপ করায় আর কোনো পর্যটককে ছেঁড়াদিয়া যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের দাবি, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা সাড়ে ১০ হাজার। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন এলাকায় আরও ৪ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষের আয়রোজগারের একমাত্র খাত হলো পর্যটন মৌসুম। বছরের চার মাস দ্বীপের মানুষ পর্যটকদের পরিবহন করে আয়রোজগারের মাধ্যমে সংসার চালাচ্ছেন।

স্পিডবোট ও গামবোট মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, পর্যটকদের পরিবহনের জন্য দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ছেঁড়াদিয়া যেতে বাধা দেওয়ায় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই রকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

২ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ১৪ দফা নির্দেশনা-সংবলিত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচার করা হয়। ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন’ এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও পর্যটকদের অসচেতনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশবিরোধী আচরণের কারণে সেন্ট মার্টিনের বিরল প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে। দ্বীপটিকে রক্ষায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বীপের সৈকতে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানসহ কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন না চালানো, সৈকত, সমুদ্র ও নাফ নদীতে প্লাস্টিক বা কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলা, দ্বীপের চারপাশে নৌভ্রমণ না করা, জোয়ার-ভাটা এলাকার পাথরের ওপর দিয়ে না হাঁটা, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে ছবি না তোলা, সৈকতে রাতেরবেলা কোনো ধরনের আলো বা আগুন না জ্বালানো, আতশবাজি ও ফানুস না ওড়ানো, মাইক না বাজানো, হইচই ও উচ্চ স্বরে গান-বাজনা কিংবা বারবিকিউ পার্টি না করা, সরকারের অধিগ্রহণ করা ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে না যাওয়া, জাহাজ থেকে পাখিকে চিপস বা অন্য কোনো খাবার না খাওয়ানো ইত্যাদি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলেন, ছেঁড়াদিয়া পর্যটক পরিবহনের বাধা দেওয়াই টেকনাফ থেকে সাতটি জাহাজে করে ছেড়ে আসা পর্যটকবাহী জাহাজকে জেটিতে ভিড়তে দেওয়া হবে না।

সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম বলেন, বছরের চার মাস দ্বীপের মানুষ পর্যটকদের পরিবহন করে আয়রোজগারের মাধ্যমে সংসার চালাচ্ছেন। ছেঁড়াদিয়া পর্যটক যাতায়াতে বাধা দেওয়াই এ খাতে বিনিয়োগ করা মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

সেন্ট মার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অছিম উদ্দিন বলেন, দ্বীপের বাসিন্দাদের কথা বিবেচনা করে আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের সমর্থনে পাঁচ শতাধিক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে শনিবার রাত্রিযাপনের জন্য দ্বীপে আসা প্রায় ২ হাজার পর্যটক নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটক যাওয়া বন্ধ করা হলে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে আসবেন না বলে জানান সেন্ট মার্টিন হোটেল ও কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দ্বীপের মানুষের আয়রোজগারের কথা চিন্তা করে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’


টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি নিশ্চিত করা স্থানীয় প্রশাসনের কাজ। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ধর্মঘটে না গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি কীভাবে সুরাহা করা যায়, সেটা চিন্তা করা উচিত ছিল।

ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্লিপ্ততার কারণে গত এক দশকে দ্বীপে প্রায় ২০০ হোটেল-কটেজ তৈরি হয়েছে। এখন তারা হুট করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই। এতে দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হবে।