Thank you for trying Sticky AMP!!

ঝড়ে অসহায় পাখিগুলো রান্না করে খেল গ্রামবাসী

গাছের ডালে শামুকখোল পাখির বাস। ফাইল ছবি

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ঝড়ো হাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছিল নাটোরের বড়াইগ্রামের বাজিতপুর গ্রামের গাছে ঠাঁই নেওয়া শামুকখোল পাখিগুলো। বাতাসের তোড়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে অন্তত ২০০ পাখি মাটিতে পড়ে যায়। এরপর গ্রামবাসী পাখিগুলো ধরে নিয়ে যান। জবাই করে রান্না করা হয় পাখিগুলো।

গ্রামের পাখিপ্রেমী তরুণ আব্দুল কাদের বলেন, তিন মাস ধরে গ্রামের বটতলা বাজারের পাশের তিনটি শিমুল গাছে আস্তানা গড়ে দুই শতাধিক শামুকখোল পাখি। দিনের বেলায় পাখিগুলো আশপাশের বিলে খাবার খেতে যেত। রাতে গাছে এসে আশ্রয় নিত। এর মাঝে অনেকেই পাখিগুলো শিকার করার চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি বাধা দেওয়ায় তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

আজ ভোরে ঝড়ের তাণ্ডবে পাখিগুলো এক এক করে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় সুযোগসন্ধানী লোকজন পাখিগুলো ধরে বাড়িতে নিয়ে যান। মাংস হিসেবে রান্নার জন্য কেটেকুটে পরিষ্কার করা হয়। খবর পেয়ে আব্দুল কাদের ছুটে যান বাড়ি বাড়ি। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। অনেকেই রান্নার জন্য এসব পাখির মাংস চুলাতে চড়িয়েছেন। পাখিরগুলোর আস্তানার কাছে ছুটে গিয়ে তিনি একটি পাখিও দেখতে পাননি।

আব্দুল কাদের বলেন, কয়দিন আগেই তিনি এসব অতিথি পাখির ছবি তুলে স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের দেখিয়েছিলেন। গর্ব করেছিলেন পাখিগুলোর নিরিবিল অবস্থান নিয়ে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান সব শেষ করে দিলো। মনে কষ্ট নিয়ে তিনি বলেন, 'অনেক বুঝিয়ে গ্রামবাসীকে এতদিন পাখিগুলোকে ধরতে দেইনি। অথচ ঝড়ের কারণে এক রাতেই পাখিগুলো শেষ হয়ে গেল। এ কষ্ট আমি কখনোই ভুলতে পারব না।'

যে শিমুল গাছে এতদিন পাখিগুলো আশ্রয় নিয়েছিল, তার পাশেই আশরাফ আলীর বাড়ি। তিনি বলেন, এক একটা পাখির ওজন ছিল ২ থেকে ৩ কেজি করে। পাখিগুলোর প্রতি গ্রামের কিছু লোকের আগে থেকেই লোভ ছিল। ঝড়ের সময় মানুষ যখন নিজেদের জানমাল নিয়ে ব্যস্ত, তখন ওইসব লোকজন পাখিগুলো ধরে নিয়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই পাখিগুলো কেটেকুটে রান্নার উপযোগী করা হয়।


চলনবিল জীব বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, অসহায় অতিথি পাখি নিধনের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে আগে থেকে তৎপর থাকা দরকার ছিল। পাখির আবাসস্থলের আশপাশের লোকজনকে সচেতন করে পাখি নিধন বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।


বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা উজ্জল কুমার কুণ্ডু বলেন, বাজিতপুরে গ্রামে অতিথি পাখি শামুকখোল পাখি থাকার বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।