Thank you for trying Sticky AMP!!

তালাক দেওয়া স্ত্রীর পরিবারকে ফাঁসাতে মামাকে খুন: পুলিশ

তালাক দেওয়া স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে মামাকে খুন করে লাশ গুম করে রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার আনছারুল করিম

চার বছরের সংসারে স্ত্রীর সঙ্গে বনিমনা হচ্ছিল না তাঁর। গত মাসে একে–অপরকে তালাক দেন এই দম্পতি। সদ্য তালাক দেওয়া স্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে ফাঁসাতে আত্মঘাতী এক পরিকল্পনা আঁটেন আনছারুল করিম। নিজের দূরসম্পর্কের মামাকে খুন করেন তিনি। মরদেহ ফেলে আসেন শ্বশুরবাড়ির সেপটিক ট্যাংকে। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না দেখে নিজেই অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে শ্যালককে জানালেন বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে লাশ থাকার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পরিবর্তে নিজেই ফেঁসে গেলেন ৩৮ বছর বয়সী আনছারুল।

ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়নের উত্তর চাকলা গ্রামে। ওই গ্রামের মোহাম্মদ হারুনের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে গতকাল রোববার দুপুরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। নিহত ব্যক্তির নাম ওমর ফারুক (৩০)। তিনি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ঝাপুড়া গ্রামের খাতুবর বাড়ির মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে। সম্পর্কে তিনি আনছারুলের করিমের মামা। আজ সোমবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার আনছারুল করিমের সঙ্গে নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়নের উত্তর চাকলা গ্রামের মোহাম্মদ হারুনের মেয়ে শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আনছারুল দম্পতি চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পারিবারিক অশান্তির জের ধরে গত ২০ এপ্রিল আনছারুল ও শারমিন নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে একে অপরকে তালাক দেন। তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না।

তালাকের পর আনছারুল করিম তাঁর স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন বলে জানানো হয় পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে। এর অংশ হিসেবে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে নিতে মামা ওমর ফারুককে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানান আনছারুল। সে অনুযায়ী, গত ৫ এপ্রিল কক্সবাজারের গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর মামা ওমর ফারুককে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান তিনি।

পুলিশ সুপার বলেন, আনছারুল তাঁর মামা ওমর ফারুককে নিয়ে নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়নে যাওয়ার আগে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করে মামাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর ৫ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটার দিকে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিসহ মামাকে শ্বশুরবাড়ি লাগোয়া বাগানে নিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ শ্বশুরবাড়ির উত্তর পাশের শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর ফেলে পালিয়ে যান আনছারুল ও ওই ব্যক্তি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামার লাশ গুম করার পর আনছারুল করিম চট্টগ্রাম ফিরে যান। এরপর গত কয়েক দিনে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না দেখে নিজেই রোববার সকালে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন করে শ্যালককে আনছারুল বলেন, তাঁদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর লাশ পড়ে আছে। তখন শ্যালক ঘটনাটি বাড়ির লোকজনকে অবহিত করেন। পরে বিষয়টি থানায় জানানো হলে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার করা লাশটি পচে অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে, যা দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। তবে মরদেহের প্যান্টের পকেটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দেওয়া একটি নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া যায়, যা থেকে ধারণা করা হয় সনদটি নিহত ব্যক্তির। এরপর যে মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন এসেছিল ওই ফোনের সূত্র ধরে আনছারুল করিমকে আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুরো ঘটনা স্বীকার করেছেন।

সুধারাম থানা ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলায় আনছারুল করিমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।